অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নেই ঢাকা উত্তর সিটির নতুন ১৮ ওয়ার্ডে, নেই নাগরিক সেবা


ঢাকা উত্তর
ঢাকা উত্তর

পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও, বাংলাদেশের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে, নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের হাজার হাজার বাসিন্দা এখনও তাদের প্রাপ্য নাগরিক সেবা পায়নি। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, “নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নেই।”

“সেবা না পেলেও, সিটি কর্পোরেশন থেকে চিঠির মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে বলা হয়েছে;” অভিযোগ বাসিন্দাদের। অনেক বাসিন্দা জানান, তারা শুধু নামেই সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে কোনো সেবা পাননি তারা।

“নতুন ১৮ ওয়ার্ডের বেশির ভাগেই সড়ক উন্নয়নে হাত পড়েনি। নেই ফুটপাত ও সড়ক বাতি। রাস্তাঘাট কাঁচা, ফুটপাত ও খালগুলো ময়লার ভাগাড়। দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়;” এমন অভিযোগ নাগরিকদের।

৪০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ওয়াহিদ বলেন, “আমরা পাঁচ বছর আগে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম। সিটি করপোরেশন আমাদের ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়ন কাজ করেনি। এখন ডিএনসিসি বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। যা বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে নাগরিক সেবা না পেয়ে আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স কেন দিব? এটা অন্যায়।”

৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ কিরন বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডের সব রাস্তাই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমাদের রাস্তা মেরামত করতে হবে।”

২০১৬ সালের ২৮ জুন নাগরিক সেবা বাড়াতে, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, বাড্ডা, সাতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে, ১১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড গঠন করা হয়। এগুলোকে যুক্ত করা হয় উত্তর সিটি কর্পোরেশনে। সিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা পায়নি এসব এলাকার বাসিন্দারা।

ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন কাজের জন্য, ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন করে। চলতি বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। তহবিলের অভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কাজ শুরু করেনি। দ্বিতীয় দফায় ২২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ হয়েছে, যা দিয়ে এই নতুন ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “সিটি করপোরেশনের অধীনে ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঠিকাদারি দেয়া হয়েছে।”

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার মধ্যে পেয়েছি মাত্র ৮৯ কোটি টাকা। বাকি টাকা দ্রুত পাবো বলে আশা করছি। এখন কম টাকা দিয়েই সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।”

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ বলেন, “একটি আদর্শ ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রশস্ত রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সুয়ারেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাকেন্দ্র, শরীরচর্চা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, নাট্যমঞ্চ, খেলার মাঠ, পার্ক, পশু জবাইকেন্দ্র, গনচৌচাগার ও বাস টার্মিনাল থাকা অবশ্যক। অথচ নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এ সবের কিছুই নেই।”

ড. আদিল মোহাম্মদ বলেন, “নতুন ওয়ার্ড এর জন্য পর্যাপ্ত সরকারি জায়গা থাকলেও, তা বেদখল হয়ে গেছে। বেশিরভাগ স্থানে বহুতল ভবন উঠে গেছে, আবার অনেক সরকারি জায়গায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। সব কিছু অধিগ্রহণ করে প্রকল্পের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের শক্ত অবস্থান নিতে হবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) অতিরিক্ত সচিব সেলিম রেজা বলেন, “নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন করতে, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা প্রকল্প আনুমদোন হয়েছে। তবে সব টাকা এখনো পাওয়া যায়নি। কিছু টাকা আমরা পেয়েছি এবং এবং সাথে সিটি কর্পোরেশন থেকে আরও কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ আপাতত শুরু হয়েছে। ৪৪ ও ৪৬ ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছি। কাজটি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকল্পের আরও টাকা পেলে, বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও কাজ শুরু হবে শিগগিরই।”

২০১৬ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়ার বিষয়ে সেলিম রেজা বলেন, “সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে।”

XS
SM
MD
LG