অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবশের সময় বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে পড়ে দুই শিশু নিখোঁজ


বাংলাদেশের নদী
বাংলাদেশের নদী

বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী সীমান্তে, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবশের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফের) ধাওয়ায় নদীতে পড়ে, দুই শিশু নিখোঁজ হয়েছে।শুক্রবার (১ জুলাই) গভীর রাতে ফুলবাড়ী সীমান্তে নদী পারাপারের সময় এ ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ পারভীন খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাছান ( ৪) পাশ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের পশ্চিম শুকাতি গ্রামের রহিম উদ্দিনের সন্তান।

জানা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময়, দালালরা তাদের ভুল পথে নিয়ে যায়। এ সময়, বিএসএফের ধাওয়ায় মায়ের হাত থেকে রাতের অন্ধকারে নদীতে ভেসে যায় এই দুই শিশু। সাঁতার জানায় মা সামিনা খাতুন বেঁচে গেলেও, ১৮ ঘন্টা পরও খুঁজে পাওয়া যায়নি দুই শিশুকে।

সীমান্তবর্তী নীলকুমর নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে শিশুদের সন্ধান পাওয়ার আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন স্বজনরা।

নিখোঁজ শিশুর দাদা জিয়া উদ্দিন জানান, “প্রায় ১৬ বছরে আগে অভাবের তাড়নায় আমার ভাগ্নে রহিম উদ্দিন অন্যদের সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করার জন্য দিল্লিতে যান। সেখানে কাজ করার পর, ২০০৫ সালে ভারতের দিনহাটার নয়ারহাট এলাকার সাজেদুল হকের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেখানে তারা বসবাস করেন। সময় পেলে মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন রহিম উদ্দিন। এর মধ্যে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে জন্ম নেয় তাদের ঘরে। টাকাও পাঠাতেন তার বৃদ্ধ মা রহিমার কাছে।”

জিয়া উদ্দিন বলেন, “নিখোঁজ দুই শিশু ভারতের ভূ-খন্ডে জন্ম নিলেও, দাদার বাড়িতে আসেনি কোনদিন। ঈদুল আজহা পালন করার জন্য প্রথমবারের মতো ছেলে মেয়েদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিল রহিম উদ্দিন।এর মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে গেলো কাঁটাতার পার হওয়ার সময়।”

নিখোঁজ শিশুদের বাবা রহিম উদ্দিন জানান, “সন্তানরা আমার পিতৃভূমি দেখেনি। সে জন্য ঈদ করার জন্য, প্রথমবার তাদের বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। পরিবারের ও ছেলে মেয়েদের নতুন কাপড় কিনে, ট্রাংকে রাখা হয়েছে। নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য ভারতের দালালদের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়েছে। তারা আমাদেরকে সীমান্তের একটি বাড়িতে নিয়ে এসে রাখেন রাতে। সেখানে আরও ২০-২৫ জন নারী পুরুষ ও শিশু ছিল।”

রহিম উদ্দিন জানান, “মধ্য রাতে ৯৪৩ নং মেইন পিলারের পাশে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের র্ধমপুর সীমান্ত দিয়ে পার করার চেষ্টা করেন। তারা কাঁটাতার পার করে নদী পথে নিয়ে আসেন। সে জন্য নদীর তীরে আমাদেরকে রাখেন। এ সময় ভারতের শেউটি -১ ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর, আমাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় দালালরা তড়িঘড়ি করে নদী পার হওয়ার জন্য বলে। আমি জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝ পথে যাই। এ সময় আমার স্ত্রীও, দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামেন। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে রাতের অন্ধাকারে স্ত্রীর হাত থেকে আমার সন্তানরা নিখোঁজ হয়। পানিতে ডুব দিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি, খোঁজাখুঁজি করেছি। তাদের সন্ধান পাইনি। কষ্ট করে আমার স্ত্রীকে পার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। তারা বেঁচে আছে, না মারা গেছে, তা জানি না।”

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আদম আলী বকুল জানান, “নীলকুমর নদীর তীরে অনেক লোকজন নিখোঁজ শিশুর মরদেহ খোঁজার জন্য এসেছে। পানিতে ডুব দিয়েও খুঁজছে অনেকে।”

এ বিষয় লালমনিহাটের কাশিপুর ক্যম্পের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, “ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে দুটি শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। আমাদের টহল সেখানে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, ছাড়াও এ বিষয়ে বিএসএফকেও অবগত করা হয়েছে।”

XS
SM
MD
LG