ভয় এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে, ভারতে ৪৩ দিনের বার্ষিক অমরনাথ যাত্রা শুরু হল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৮৮৮ মিটার উপরে অবস্থিত, ভারত-শাসিত কাশ্মীর অঞ্চলের একটি গুহায় ওই হিন্দু তীর্থযাত্রায় শামিল হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী। এবারের যাত্রাটি শুরু হল তিন বছর পর।
গত ৩০ জুন থেকে শুরু হওয়া এই বছরের যাত্রায় ৫ লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বসাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই অঞ্চলটিতে প্রায় ৫০,০০০ তীর্থযাত্রী প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে পবিত্র মন্দির পরিদর্শন করেছেন।
২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট ভারত সরকার হঠাৎ করে জম্মু ও কাশ্মীরের উপর থেকে আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা প্রত্যাহার করার পর, ব্যাপক লকডাউন শুরু হলে যাত্রাটি বাতিল করা হয়। এরপর ২০২০ এবং ২০২১ সালে কোভিড মহামারীর কারণে এই আয়োজন স্থগিত করতে বাধ্য হয় তারা।
এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো গুহায় ভ্রমণ করছেন মানিস জাট নামের এক হিন্দু ভক্ত। তিনি বলছেন, "দুর্ভাগ্যবশত, কোভিড লকডাউনের কারণে আমি দুই বছর এখানে আসতে পারিনি, তবে এবার ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু হতে দেখে বেশ আনন্দ লাগছে।"
নিরাপত্তা হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত সরকার গুহায় যাওয়ার পথে তীর্থযাত্রীদের ব্যবহৃত প্রধান সড়ক গুলোতে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সাথে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে।
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্য থেকে আসা একজন তীর্থযাত্রী প্রবেশ কুমার বাল বলেন, "সরকার জম্মু থেকে পবিত্র গুহা পর্যন্ত যেভাবে আমাদের নিরাপত্তা দিয়েছে, তা দেখে আমি খুশি।"
তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষার জন্য একাধিক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে ড্রোন নজরদারি, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণ এবং ইতোমধ্যে মন্দিরে থাকা শতাধিক নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা।
জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা রবিবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, "নিরাপত্তা বাহিনী এবার আরও ভালভাবে সমন্বয় করেছে, এবং আমি বলতে পারি, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেরা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে এটি একটি। ভগবানের কৃপায় এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক চলছে।"
বাৎসরিক এই ধর্মীয় উৎসব চলাকালে তীর্থস্থানটি স্থানীয় ব্যবসা এবং অন্যদের জন্য আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে ওঠে। এসময় অনেকেই দর্শনার্থীদের খাবার, বাসস্থান, স্মারক বস্তু এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করে থাকে।
স্থানীয় বণিক সংস্থা, কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হিসাব মতে, বিগত তিন বছরের লকডাউন এবং তীর্থযাত্রা বাতিলকরণের কারণে এই অঞ্চলে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার লোকসান গুনতে হয়েছে।
অমরনাথ যাত্রা চলাকালে জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য, ডাক্তার এবং প্যারামেডিক মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তহবিল দিয়ে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক দুটি ৫০-শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।