অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ


বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৯ জেলায় আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক-এর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এবারের বন্যা মে মাসে শুরু হয় এবং এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় ১৫ জুন। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো; সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর। এই ৯ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণা।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “গত ২ ও ৩ জুলাই জাতিসংঘের একটি যৌথ মিশন, মানবিক দাতা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য) ও এনজিও অংশীদাররা বন্যা কবলিত জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ পরিদর্শন করেন। মিশনের লক্ষ্য ছিল- বন্যার প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও সাড়াদান, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং সমবেদনা জানানো।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “মিশন,বন্যার মাত্রা দেখতে, ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষের কাছ থেকে শুনেছে; সরকারের সংস্থা এবং প্রধান স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। মিশন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় সরকারের সাড়াদানের মাত্রা ও সুযোগের ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছে। ৪ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে, এক হাজার ৬০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করেছে সরকার। আমরা যে সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা ছিলেন। তাদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।”

“জাতিসংঘ ও এনজিও অংশীদাররা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা, পানীয় জল, নগদ অর্থ, জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মর্যাদা ও স্বাস্থ্যবিধি কিট ও শিক্ষা সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে। এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বন্যার মাত্রার কারণে, এমন কিছু এলাকা রয়েছে যা এখনও দুর্গম। উদ্ধার বা ত্রাণ থেকে বিচ্ছিন্ন;” উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অনেক প্রবীণ এই বন্যাকে তাদের জীবদ্দশায় দেখা যে কোনো বন্যার চেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, দুর্গত এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার নারী গর্ভবতী। তাদের মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার, আগামী মাসে সন্তান জন্মদান করবেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা-কেন্দ্র তলিয়ে যাওয়া ও অকার্যকর হওয়ায়, এসব নারীর বেশিরভাগেরই স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার সীমিত বা নেই। যেখানে পানি কিছুটা কমেছে, সেখানে, পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ফিরে যাবে; অনেকের বাসস্থান পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাট্রিন ও পানির উৎস মেরামত করা দরকার। শিশুরা ইতিমধ্যে তিন সপ্তাহের স্কুলে পড়া হারিয়েছে এবং তাদের বই ভেসে গেছে। ২০২০-২০২১ সালে করোনায় স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষার ক্ষতি থেকেও এই ক্ষতি তীব্র।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বর্তমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ও বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক এনজিওগুলোকে ১২ লাখ ইউরো এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে দুই লাখ ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। আর, যুক্তরাজ্য ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৮ পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে। সুইডেন এক কোটি ৩০ লাখ ১৩ এসইকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে, আড়াই লাখ ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।”

XS
SM
MD
LG