অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"প্রবাসী ভাইদের প্রায়োরিটি দিয়েছি, কারণ তারা আমাদের রত্ন"


চিত্রাভিনেতা অনন্ত জলিল।
চিত্রাভিনেতা অনন্ত জলিল।

বাংলাদেশের আলোচিত অভিনেতা অনন্ত জলিল। ২০১০ সালে খোঁজ-দ্য সার্চ চলচ্চিত্র দিয়ে সিনেমা জগতে পা রাখেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা প্রযোজনাও করেন। একই সঙ্গে, বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী অনন্ত। অনন্ত জলিলকে নিয়ে প্রচুর মানবিক গল্প যেমন রয়েছে, তেমনই কিছু সমালোচনাও রয়েছে।

এবারের ঈদে এই অভিনেতার “দিন- দ্য ডে” চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, যৌথ প্রযোজনার এই সিনেমাটি বিশাল বাজেট নিয়ে নির্মিত হয়েছে। প্রযোজনা ছাড়াও, ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। সিনেমা জীবন ও সিনেমার বাইরের জীবন নিয়ে,ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে অনন্ত জলিলের সঙ্গে কথা বলেছেন মাহতাব হোসেন।

ভয়েস অফ আমেরিকা: দিন-দ্য ডে চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট কী?

অনন্ত জলিল: দিন-দ্য ডে বাংলাদেশের মাইলফলক ছবি। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম বড় বাজেটের ম্যুভি করি। এটা যৌথ প্রযোজনার ছবি। টুয়েলভ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। এটা আরেক দেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় করা হয়েছে, ফলে সেই দেশের সেনা, নৌ বিভিন্ন বাহিনী সরাসরি অভিনয়ে অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা একটি স্বপ্নের ম্যুভি। যেখানে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছে। এটাকে আমি ড্রিম প্রোজেক্ট বলছি এ কারণেই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এই চলচ্চিত্রের গল্পে আপনার অভিনয় ও চরিত্রকে যদি একটু বিশ্লেষণ করতেন।

অনন্ত জলিল: এখানে আমার যে চরিত্রটি, আপনারা জানেন প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্স আসে বিদেশ থেকে। তারা বিদেশে গিয়ে নানা ধরনের বিপদের সম্মুখীন হয়, আমাদের এই সিনেমায় সেসব গল্প জীবন্তভাবে তুলে ধরেছি। তাদেরকে উদ্ধারের জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ সরকার থেকে নেওয়া হয়, আমরা এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেসব তুলে ধরেছি। আরেকটা জিনিস আমরা তুলে ধরেছি, তা হলো ড্রাগস। আমরা হলিউডের মুভিতেও যেসব দেখিনি, সেসব দৃশ্য এখানে তুলে ধরেছি। আমরা হয়তো দেখেছি, ড্রাগ অ্যাডিক্টেড, ড্রাগ নিয়ে আরও অনেককিছু দেখেছি। কিন্তু ড্রাগ ফার্মিং দেখিনি। এই ছবিতে আফগানিদের ড্রাগ সাপ্লাই চেইনটা তুলে ধরেছি। এই ছবিতে আরেকটা বিষয় তুলে ধরেছি, রোহিঙ্গা ইস্যু। বাংলাদেশ অনেক রোহিঙ্গাকে স্থান দিয়েছে। ট্রেলার প্রকাশের পর এই সিনেমার একটি সংলাপ এখন মুখে মুখে। আমি যখন আফগান ড্রাগ ফারমারকে ধরতে যাই, সে আমাকে বলে, “বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যেটাকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁজে দেখতে হয়, আর তুমি সেই দেশের পুলিশ হয়ে আমাকে ধরতে এসেছ?” তখন আমি বলি, “বাংলাদেশ অনেক ছোটব দেশ, কিন্তু তার বুকে অনেক জায়গা।”

ভয়েস অফ আমেরিকা: চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য লিখেছেন আপনি? এর নেপথ্যের গল্পটি কিভাবে এলো?

অনন্ত জলিল: গল্পে প্রবাসী ভাইদের প্রায়োরিটি দিয়েছি, কারণ তারা আমাদের রত্ন। বাংলাদেশের দুইটা সেক্টর, একটা আরএমজি আরেকটা প্রবাসী। প্রবাসীরা বৌ-বাচ্চা রেখে বিদেশে গিয়ে কাজ করে, তাদের পরিবারের কাছে টাকা পাঠায়। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা আর আগুনের ওপরে থাকা একই কথা। সে অবস্থা থেকে তারা দেশে টাকা পাঠায়। শুধু তার পরিবার ভালো থাকবে বলে। আমি মুভিটি এ কারণেই তাদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে লিখেছি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিলেন, অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অনন্ত জলিল: কান উৎসবে আমন্ত্রিত শিল্পী ও প্রযোজকদের এজেন্ট থাকে। আমাদের এজেন্টের নাম অ্যালিস। তিনি অভিষেককে দেখিয়ে আমাকে বললেন, “তুমি কি তাকে চেনো?” আমি বললাম, “হ্যাঁ” তিনি একজন বলিউড তারকা”। অ্যালিস বললো, “তাহলে তুমি তাদের সঙ্গে কথা বলছ না কেন?” আমি বললাম, “কোনো কারণ ছাড়া কীভাবে কথা বলি?” তখন অ্যালিস ঐশ্বরিয়া-অভিষেকের এজেন্টকে গিয়ে বললো, আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, আমরা বাংলাদেশের ফিল্ম স্টার। তখন তাদের এজেন্ট ঐশ্বরিয়া ও অভিষেককে আমাদের কথা বলতেই অভিষেক বচ্চন আমার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোন ধরনের সিনেমা প্রযোজনা করো বা তোমাদের দেশে কোন ধরনের সিনেমা বানানো হয়?” তখন আমি বললাম, “বাংলাদেশে বড় বড় সিনেমা তৈরি হয়”। আমাকে অভিষেক বললো। “আমি তোমার কোনও ম্যূভি দৃশ্য কিংবা ট্রেলার দেখতে পারি? তোমার মোবাইলে আছে?” আমি বললাম, “হ্যাঁ।“ আমি যখন তাঁকে ট্রেলার দেখালাম। তিনি বললেন, “নো, দিস ইজ নট বাংলাদেশি’স ম্যুভি দিস ইজ হলিউড ম্যুভি। আমি বাংলাদেশি ম্যুভি জানি”। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কীভাবে জানো?” অভিষেক বললেন, “আমার মা কলকাতার।” ওটা দেখেই ঐশ্বরিয়া হাসতেছিল। অভিষেক বললো, “আমি খুব ভালো করেই জানি।” আসলে আমাদের ম্যুভি তো বাংলাদেশি ধাঁচের ম্যুভি না, এজন্যই অভিষেক এ কথাটা বলছিল।

ভয়েস অফ আমেরিকা: তাহলে বলছেন এমন সিনেমা বাংলাদেশে নির্মাণ হয়নি আগে?

অনন্ত জলিল: না। আগামীতে হলে ভালো হয়। আমাদের পরবর্তী প্রজেক্ট, নেত্রী--দ্য লিডার। ঐ সিনেমাটা তুরস্কের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় করবো। হয়তো ওটার মতো বাজেট হবে না। কিন্তু লেভেলটা চেষ্টা করবো। যেহেতু তুরস্কের টেকনিশিয়ানরা রয়েছেন। বাট এইটা নট পসিবল, যে এই ধরনের মুভি করে কেউ প্রেজেন্ট করবে। এতো বড় বাজেটের ছবি, আর সবচেয়ে বড় কথা অ্যারেজমেন্ট ইজ ভেরি ইমপোর্ট্যান্ট। বিভিন্ন দেশে গিয়ে, এতো বড় কোম্পানির সঙ্গে লিয়াঁজো করে, এটা সম্ভব না। এই মুভিতে একটা গান আছে। যেটা শুটিং করা হয়েছে সিরাত নগরীর একটা জায়গায়। যার ইতিহাস চার হাজার বছরের। সেখানে টুরিস্টদেরও ঢুকতে দেওয়া হয় না। আমরা সরকারের স্পেশাল পারমিশন পেয়েছি। আসলে অনেক সময় টাকা থাকলেও সবকিছু হয় না। আমরা মরে যাওয়ার পরে যদি কোনোদিন বাংলাদেশের ম্যুভি সেক্টরে পরিবর্তন আসে, তাহলেও এমন ম্যুভি সম্ভব না। আমরা বেঁচে থেকে এমন ম্যুভি দেখতে পারলে তো আমাদের সেটা সৌভাগ্য।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি তো বর্ষা ছাড়া কোনো নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেন না। যদি আপনাকে প্রয়োজন হয়, হলিউডের কোনও নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করতে বলা হয়? কাকে বেছে নেবেন?

অনন্ত জলিল: আসলে ঐ ধরনের ম্যুভি করলে তো তেমন ফিগারই দরকার। আমি অ্যাঞ্জেলিনা জোলির পারিশ্রমিক সার্চ করে দেখেছি। কম করে তিনি ১৫ মিলিয়ন ডলার নেন। এই ধরনের কাজ তো আর হবে না।

ভয়েস অফ আমেরিকা: অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্ত জলিলের কাজ। যদি আপনি হলিউড ম্যুভি করাটাকে সম্ভব করে ফেলেন; সেক্ষেত্রে আপনি কাকে নেবেন নায়িকা হিসেবে? অ্যাঞ্জেলিনা জোলি?

অনন্ত জলিল: অ্যাঞ্জেলিনা জোলি শুধু আমার না; সারা পৃথিবীর পছন্দের নায়িকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। যদি গল্প ঐ ধরনের হয়। নায়িকাকে বুকে জড়ায়ে ধরতে হবে না। বা নায়িকার সঙ্গে রোমান্টিক ঐ ধরনের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য না থাকে, তাহলে চিন্তা করবো। আর আমরা আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে চাই না। যদি আমরা কখনো হলিডের ম্যুভি করার চিন্তা করি, আমাদের নানা ব্যবসা বাণিজ্য আছে। আমি যদি করার চেষ্টা করি, আল্লাহতায়ালার দয়ায় সেটা পারবো। যেহেতু গোটা ওয়ার্ল্ডে আমার একটা পরিচিতি আছে। যদিও আমারা আমেরিকার ওয়ালমার্টসহ বড় বড় বায়ারদের সঙ্গে কাজ করি, তারাও সিনেমায় প্রোডিউস করে। আমাদের নেক্সট প্রোজেক্ট আপনাদের মাধ্যমে বলি, আমাদের নেক্সট প্রোজেট হলো, দ্য লাস্ট হোপ। এটা আমরা নরওয়ের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় করছি। যেহেতু আমার পরিচিতি আছে ইউরোপ আমেরিকা, কানাডা, তুরস্কে; আমি কিন্তু চাইলে ঐ ধরনের কাজ আল্লাহতায়ালার দয়ায় করতেই পারি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার সর্বশেষ দেখা সিনেমা কোনটি?
অনন্ত জলিল: টপগান। আমরা যখন কান উৎসবে ছিলাম। সেখানে দেখলাম টমক্রুজকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হলো। তখন মনে হলো আমরা টপগান সিনেমাটা দেখবো। কান থেকে ইতালি গেলাম আমরা। সেখান থেকে ফিরে প্যারিসে দেখতে চেয়েছিলাম টপগান। কিন্তু, আমরা যেদিন ফিরবো সেদিন অফিশিয়ালি রিলিজ হওয়ায় প্যারিসে দেখতে পারিনি। ঢাকায় এসে দেখেছি। আমি বলতে পারি, এটা একটা মিরাকল ম্যুভি । এই ছবির ডিরেক্টর মনে হয় জোসেফ কোসেন্সকি। আমার মনে হলো এমন একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে যদি কাজ করতে পারতাম, তাহলে এটা হতো আমার ম্যুভি-জগতে স্বার্থকতা।
ভয়েস অফ আমেরিকা: মনে হচ্ছে আপনি অভিনেতা হিসেবে টম ক্রুজকে অনুসরণ করেন?
অনন্ত জলিল: এটা যদি না বলি, তাহলে একদম ভুল হবে। মিশন ইম্পসিবল সিনেমায় টম ক্রুজ যখন বুর্জ আল খলিফার চূড়া থেকে জাম্প করে, আমার তখন থেকেই ইচ্ছে এরকম উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফ দেওয়ার। বুর্জ খলিফায় ওরকম শুটিং করতে আমাদের কেউ দিবেওনা। টম ক্রুজ বলে হয়তো দিয়েছে। আমি চিন্তা করলাম থাইল্যান্ডের এমন উঁচু একটা বিল্ডিং থেকে শট দেব। ব্যাংককে পাতু নামের এমন একটা বিল্ডিং আছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললাম। তারা নানা কারণ দেখিয়ে রাজি হচ্ছিল না। তখন ওরা দিলো না। পাতায়াতে একটা বিল্ডিং ভাড়া নিলাম ২৩ তলা। ঐ ২৩ তলা থেকে জাম্প করার জন্য আমি যখন সম্পূর্ণ রেডি, জাম্প না ঠিক বিল্ডিংয়ে পা দিয়ে হেঁটে নেমে যাওয়া। ও (বর্ষা) যখন কার্নিশের কাছে গিয়ে দেখলো আমাকে। তখন এসে বললো, “তুমি এই শট দিতে পারবা না”। এটা কিছুতেই সম্ভব না। এভ্রিথিং রেডি, শট দিতে পারবো না মানে? আমাকে শট দিতেই হবে। ও তখন মন খারাপ করে ক্যারাভানে এসে বসে রইলো, বললো, “আমি শট দিতে দিব না”।

সবসময় এই ধরনের কাজগুলো করতে চাই। আমার মনে হয় আরেকজন করতে পারলে আমি পারবো না কেন? এই ধরনের কাজগুলো আমার মনে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। টম ক্রুজ ছাড়াও আমার পছন্দের ড্যানিয়েল ক্রেগ, জেসন, পিয়ার্স ব্রোসনান। ব্রোসনানের সব ছবি আমরা দেখেছি একসঙ্গে। এছাড়াও, ভিন ডিজেল পছন্দের। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গেলেই হলিউডের মুভি দেখি, একবার না কয়েকবার করে দেখবোই। দেখি,বোঝার জন্য।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি তো একজন ব্যবসায়ীও। গার্মেন্টস ব্যবসা রয়েছে। যদি বলা হয় আপনি আগে অভিনেতা নাকি ব্যবসায়ী?

অনন্ত জলিল: আমার মেইন ফোকাস কিন্তু বিজনেস। আমি যখন ২০০৮ সালে সিনেমা শুরু করি, তখন আমাদের শ্রমিক ছিল ৩ হাজার ৬০০। ১৪-১৫ বিঘার ওপর ফ্যাক্টরি ছিল। এখন আমাদের প্রোজেক্ট হচ্ছে ৬৪ বিঘার ওপর। সাড়ে ১২ হাজার লোক কাজ করে। আমি ম্যুভি করতে গিয়ে কিন্তু বিজনেসকে প্রবলেমে ফেলিনি। আগে বিজনেসকে ফোকাস করে, তারপর ম্যূভি করেছি। কারণ এটা একটা কর্মসংস্থান মানুষের। যেহেতু আমাকে দুই দিকে ব্যালান্স করে কাজ করতে হয়, সেহেতু আমাকে অনেক চিন্তা করে পা ফেলতে হয়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার সিনেমার দর্শক কোন শ্রেণীর? মানে কোন ধরনের ভক্ত আপনার বেশি?

অনন্ত জলিল: আমাকে হল মালিকেরা চিঠি লিখেছিল। বলেছিল, “আপনার ছবি দেখতে আসে সব বড় বড় মানুষেরা, বিএমডব্লিউ গাড়ি নিয়ে, অডি গাড়ি নিয়ে। আমাদের এখানে গাড়ি রাখার জায়গা নাই”। আপনারা দেখেছেন বলাকা হলের সামনে অনেক বড় জায়গা, সেখানে গাড়ি রাখার জায়গা থাকে না। আমার দর্শক মিনিস্টার লেভেল থেকে একেবারে কৃষক লেভেল পর্যন্ত। আমি আজ পর্যন্ত এমন একজন লোক পাইনি, যে আমার ছবি দেখেনি। একজন আমাকে বলে, “আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে আপনার ছবি দেখেছি, আজ আপনার ছবি দেখলাম”। যারা নিয়মিত ছবি দেখে, তারা তো দেখেই। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত বাবা মায়ের সঙ্গে গিয়ে আমার ছবি দেখে। আপনি যদি কাউন্ট করেন, ওয়ান টু টেন, তাহলে ওয়ান টু টেন-ই আমার ছবি দেখে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাংলাদেশের এই মুহূর্তের শীর্ষ অভিনেতারা আর আপনি; পার্থক্য করতে বললে আপনি কিভাবে পার্থক্য করবেন?

অনন্ত জলিল: আমি যদি পার্থক্য করতে যাই, তাহলে বলবো আপনাকে পার্থক্য তৈরি করতে হবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ক্যাপাবিলিটি দিয়ে। আপনি যদি অভিনয় করেন, তাহলে তো আপনি শুধু অভিনেতা- দ্যাটস ইট। বাস্তবতা হলো, কেন আপনাকে মানুষ ভালোবাসবে। দেখেন দেশের দুর্যোগে সবার আগে আমি। অনেকেই শুধু মুখ দিয়ে আর সংবাদ বানিয়ে কথা বলে, পরে সত্যতা পাবেন না। অনেকেই এবার সংবাদ করেছে, ফেসবুককে স্ট্যাটাস দিয়েছে, আমি অমুক জায়গা থেকে এতো টাকা দিলাম। কই ১০০ টাকা দিছে প্রমাণ দেখাতে পারবে?

আমি কাজে প্রমাণ করি। এই যে ২৪০০ এতিম বাচ্চাকে দেখাশোনা করি, আজকে থেকে না, অনেক আগে থেকে। প্রতিদিন আমি মানুষের কাজে থাকি। প্রত্যকেটা দিন নানা সমস্যা নিয়ে আসে। প্রত্যেকটা জায়গায় মানুষ আমাকে পায়। এই যে সিলেটে বন্যা, আমি সবার আগে দুইশো হারিকেন কিনেছি, দেড়শো টর্চ লাইট আর মোমবাতি লোকজনকে দিয়ে পাঠিয়েছি। ৪০ জনকে ঠিক করেছি, যারা ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে বন্যা কবলিতদের উদ্ধার করবে। প্রথমেই আমি ১০ লাখ টাকা দিয়েছি, যেটা আলোচনাতেই আসেনি। তারপরে আপনারা দেখেছেন দিন-দ্য ডে’র টি শার্ট পরে বাজার করা থেকে বিতরণ, সব করেছি আমরা। শুধু এটাই নয়। যে কোনো দুর্যোগে মানুষের কল্যাণে কাজ করি। এজন্য সবাই বলে অনন্ত জলিল ভাই একজন বাস্তবের হিরো, রিয়েল হিরো।

৮ বছর আগের একটা ঘটনা বলি, আবুল মাল আব্দুল্লাহ মুহিত আমাকে ফোন দিয়েছেন। তিনি বলছেন, “বাবা আমার ছেলে মেয়েরা আমাকে বলছে, তুমি কিসের মন্ত্রী আমাদেরকে অনন্ত জলিলের সঙ্গে দেখা করাতে পারো না? ওরা আমেরিকা থেকে এসেছে। তুমি ওদের সঙ্গে ম্যুভি দেখে আমাকে বাঁচাও। তাকে ও তার পরিবারকে নিয়ে আমরা যমুনা ব্লকবাস্টারে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখি। পরে মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমাও তার পরিবারের সঙ্গে দেখি আমরা। জুনায়েদ আহমেদ পলক ভাইও দেখেছেন।

আপনি ব্যাংকে যান, মোবাইল কোম্পানিতে যান, আপনি খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে যান, সবাই আমাদের ম্যুভি দেখে। এর মানে এই না যে, অনন্ত-বর্ষা ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী। অনন্ত-বর্ষাকে সবাই কাছে পায় বলেই ভালোবাসে। করোনার সময় ৪ কোটি টাকা মানুষকে আমরা হেল্প করেছি। বর্ষা একদিন বলে, আমাদের ঘরে ১০০ টাকাও নেই বাজার করার। এমন অবস্থা ছিল আমাদের। করোনার সময় কতভাবে যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বর্ষা নিজেও গাড়ি নিয়ে গিয়ে বস্তিতে বস্তিতে খাবার বিতরণ করতো। প্রতিদিন সাহায্যের জন্য শত শত লোক আসতো। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি। শুধু ঢাকাতে নয়, জেলাতে জেলাতে গিয়ে সাহায্য করেছি। তাহলে আপনি বলেন, অভিনেতা হিসেবে বিচার করবেন, না-কি অনন্ত জলিল ও বর্ষা হিসেবে বিচার করবেন? তাহলে মানুষ আমাদের ছবি দেখবে না কেন?

ভয়েস অফ আমেরিকা: তাহলে অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে মানবিকতার একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলছেন?

অনন্ত জলিল: থাকতে হবে। মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমার সময়, আমরা তখন হাদরাবাদে শুটিং করছি। সেখানে চেন্নাইয়ের একটা দল কাজ করছে। আমি শুটিং করছি, একজনকে আঘাত করলাম। সাথে সাথে তাকে উঠিয়ে বুকে জড়ায়ে ধরলাম। কারণ সে তো আঘাত পেতে পারে। একজন একটা গ্লাস ভাঙলো। তার পারিশ্রমিক ৫ হাজার, সাথে সাথে আমি আরো ১০ হাজার রুপি দিয়ে দিলাম। তখন তারা আমাকে বললো, “দেখো তোমার সঙ্গে আমরা দুই তিনটা ম্যুভিতে কাজ করে ফেললাম। আজকে একটা কথা না বললেই নয়। আমাদের দেশে একজন অভিনেতা আছে, রজনীকান্ত, সে তোমার মতো।”

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার সংলাপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল হয়, মিমস হয়, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অনন্ত জলিল: শুধু আমি না, যারা ফেমাস হয় তাদেরকে নিয়ে এসব হয়। পৃথিবীতে যারা ফেমাস হবে, তাদের ছোট ছোট ত্রুটি বের করে কিছু মানুষ লিখবে, অন্য একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে তো তারা এটা করবে না। তাদের ভিউয়ার্স বাড়বে, সাবস্ক্রাইবার বাড়বে। ঐটাকে আমি নেগেটিভভাবে দেখি না। আর যদি কমেন্ট পড়ি, তখন হয়তো দেখি, এটাকে রেক্টিফাই করা যায় কি না।

XS
SM
MD
LG