অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিশেষ সাক্ষাৎকারঃ তারিকুল ইসলাম


তারিকুল ইসলাম।
তারিকুল ইসলাম।

বিশ্বব্যাপী মানব পাচার রোধে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের স্বীকৃতিসূচক সম্মাননা জানিয়েছে। তাদেরই একজন হচ্ছেন বাংলাদেশের তারিকুল ইসলাম তিনি মানব পাচার বিরোধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে আসছেন ২০১৭ সাল থেকে। বর্তমানে তিনি ব্রিটেন ভিত্তিক সংগঠন জাস্টিস এন্ড কেয়ারের বাংলাদেশ শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের পরিষেবা প্রদান, তাদের প্রত্যাবর্তনে সহায়তা দেওয়া এবং মানব পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রয়োগকারীদের সহযোগিতা দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর দিকে নিবেদিত রয়েছে জাস্টিস এন্ড কেয়ার

তারিকুল ইসলাম ২০২১ সালের টিপ (ট্র্যাফিকিং ইন পার্সনস) রিপোর্টে দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নসহ মানব পাচার রোধ বিষয়ক বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে সহায়তা প্রদান করছেন, যেমন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের স্বদেশে প্রত্যার্তনের জন্য তিনি আন্তঃসীমান্ত আলোচনার আয়োজন করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে এ ব্যাপারে সরকারি ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব সৃষ্টিতে সাহায্য করেছেন মানব পাচার প্রতিরোধে মন্ত্রনালয়কে তার ন্যাশনাল প্ল্যান অফ অ্যাকশান (২০১৮-২০২২) ‘এর খসড়া তৈরিতেও তরিকুল ইসলাম সহায়তা করেছেন

নির্ভরযোগ্য পরামর্শ, নির্ভেজাল দৃষ্টিভঙ্গি এবং সম্মুখসারিতে কাজ করার অভিজ্ঞতার জন্য, মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের কর্মতৎপরতায় তারিকুল ইসলাম একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন সম্প্রতি মানব পাচারের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে। তার এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আনিস আহমেদ।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাংলাদেশে বর্তমানে মানবপাচারের সামগ্রিক অবস্থাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তারিকুল ইসলাম: এটা তো একটা বহুমুখী ব্যাপার। মানবপাচার তো বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। তো আমি সামগ্রিকভাবে বলব যে, বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রতিরোধ ও দমনে। আমার মনে হচ্ছে যে, আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি। যদিও ট্র্যাফিকিং এখনো আছে এবং সেটা রিপোর্টও হচ্ছে। কারণ পাচার এমন একটা ব্যাপার যেটা রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত তো জানা যায় না। তো আমরা দেখছি যে এরাউন্ড নয়শ থেকে এক হাজার মামলা মানব পাচারের ঘটনা রিপোর্ট হচ্ছে পুলিশে এবং সেটা ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: মানব পাচারের প্রধান কারণ কী? এর সঙ্গে কেবলই কি যৌনব্যবসা জড়িত না আরো কিছু?

তারিকুল ইসলাম: না, আমি যেটা প্রথমেই বললাম এটা এখন বহুমুখী। এটা একসময় ছিলো যে, এটার সাথে শুধুমাত্র কমার্শিয়াল সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন (commercial sexual exploitation) জড়িত ছিলো। যার ফলে এটা বহুমুখী হয়ে গেছে। এটা এখন শ্রমের নামেও পাচার হচ্ছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: মানবপাচারের শিকার যেসব ব্যক্তি দেশ ফিরে আসতে পারছেন, সরকার ও বেসরকারী সংস্থাগুলো অর্থাৎ এনজিও সম্মিলিতভাবে তাদের আশ্রয় ও অন্যান্য পরিসেবা প্রদানে কী ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারেন?

তারিকুল ইসলাম: প্রথমত হচ্ছে, আমাদের যারা মানব পাচারের ভিক্টিম তাদেরকে চিহ্নিত করাটা খুবই জরুরী। ইনভেস্টিগেশন অফ ভিক্টিম ইজ ভেরি ইম্পর্টেন্ট। যদি তারা বিদেশে পাচারের শিকার হয়ে থাকেন তাদেরকে সেই অবস্থাতে ট্রমা ইনফর্মড ও ভিক্টিম সেন্ট্রিক উপায়ে ফেরত আনা এবং তাদেরকে আবার রিইনটিগ্রেশনে সহায়তা করা। সেই কাজেও ভিক্টিম সেন্ট্রিক ও ট্রমা ইনফর্মড করা। বাংলাদেশ সরকারের চিন্তা আছে, কারণ বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে তাদেরকে ফেরত আনার। এবং রিইনটিগ্রেশনে মূলত এই বেসরকারী সংস্থাগুলো বিশেষ ভুমিকা রাখছে কিন্তু সরকার সামগ্রিক সহযোগিতা প্রদান করছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনারা যদি ধরুন আগামী দু’বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে মানবপাচার বন্ধ করতে চান তাহলে কোন বিষয়ে আপনারা সবচেয়ে প্রথমে মনোযোগ দেবেন?

তারিকুল ইসলাম: আমি প্রথমে মনোযোগ দেবো অভ্যন্তরীণ পাচারে। সব এজেন্সির একটা কো-অর্ডিনেশন বা সমন্বয়টা যেন জোরদার করা হয়। আর আন্তঃসীমান্ত বা আন্তর্জাতিক পাচারের ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে, সোর্স, ডেস্টিনেশন এবং ট্রানজিটগুলো একসাথে সমন্বয় করে কাজ করা উচিত। এবং তাদের নিজেদের মধ্যে লিগ্যাল এসোসিয়েশনশিপ থাকা উচিত। যাতে করে পাচারকারী একটি দেশে অপরাধ করে আরেকটি দেশে নিরাপদে অবস্থান করতে না পারে। আমি সমন্বয়টা দেখছি। এটা যদি জোরদার করা হয়, এবং ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমটাকে আরেকটু শক্তিশালী করা হয় তাহলে আমি মনে করি যে আগামী দু’বছরের মধ্যে পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব।

ভয়েস অফ আমেরিকা: পরিশেষে একটি প্রশ্ন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকেও আমরা মানব পাচারের কথা শুনে থাকি। এ ব্যাপারে আপনাদের কি কোনো উদ্যোগ আছে?

তারিকুল ইসলাম: আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে আমরা রোহিঙ্গা কমিউনিটির সাথে কাজ করি না। কিন্তু আমার যতটুকু ধারণা আছে, আমি জানি যে, সরকার তার সর্বোচ্চ করছে এই রোহিঙ্গা কমিউনিটিতে যে মানব পাচার হচ্ছে তা প্রতিরোধ করার জন্য।

XS
SM
MD
LG