বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শিবসার চরে বনায়ন প্রকল্পের গাছ মরে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায়, বৃষ্টির পানিতে ডুবে গাছ মরছে বলে জানিয়েছেন বনবিভাগের কর্মকর্তা।
জেলার পাইকগাছা উপজেলার শিবসার নিম্নাঞ্চলে লবণ পানির প্রবেশ ঠেকাতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এর উদ্বোধন করেন।
বেড়িবাঁধের কারণে, তিন মাসের মধ্যে বাঁধের ভেতরে পানি জমে এলাকার গাছপালা মরতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে, স্থানীয় পৌরসভাকে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন পাইকগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
শিবসা নদীর তীরে অবস্থিত পাইকগাছা পৌরসভা, প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। এপ্রিল মাসে নির্মিত এই বাঁধ ছাড়া, গত ২৪ বছরে এই এলাকায় কোনো বাঁধ নির্মিত হয়নি। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় নদীর পানি ফুলে উঠে এবং পুরো এলাকার ঘরবাড়ি, দোকান-পাট এবং রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়।
এছাড়া গত কয়েক বছর থেকে খুলনা সদর থেকে হাড়িয়া নদী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ভরাট করা হয়েছে। এর পর, দখল ঠেকাতে, ভরা অংশের বিভিন্ন এলাকায় বনায়ন গড়ে তুলে উপজেলা প্রশাসন। এতে একদিকে বন্ধ হয় দখল প্রক্রিয়া, অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই নতুন বন।
শিবসা তীরে শহর রক্ষা বাঁধের ফলে, জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করতে না পারলেও, বৃষ্টির পানিতে বাঁধের ভেতরের অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
পাইকগাছা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, “শিবসা নদীর চর ভরাটি জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনাঞ্চলীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করে বনায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বাইন, কেওড়া, ওঁড়া, সুন্দরী ও গোলপাতা গাছ। এ গাছগুলো জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তা হলে জলাবদ্ধতার কারণে সেখানকার সব গাছ মরে যাবে। ইতোমধ্যে গাছ মরা শুরু হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে, সব গাছ মরে যাবে।”
পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, “নদীর মাঝখানে না করে লোকালয়ের পাশে বাঁধ তৈরি করলে গাছগুলো বেঁচে থাকত।”
পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, “নদী দখলের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের কারণে শিবসা নদী তার গভীরতা হারাচ্ছে। এছাড়া, নদীটি সংকুচিত হয়ে পড়ছে।”
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, “নদীর জায়গা দখল করে শহর রক্ষা বাঁধ রাখা যাবে না। মানুষের প্রয়োজনে শহর রক্ষা বাঁধটি হতে হবে শহরের পাশ দিয়ে। বনায়ন ও নদীর ক্ষতি করে এমনভাবে বাঁধ দেয়া যাবে না ।”
তিনি বলেন, “বাঁধ অপসারণে পৌরসভাকে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধ অপসারণ না করা হলে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা অপসারণ করা হবে।”