আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সাবেক সহকারী প্রধান, মুখতার রোবোকে সোমালিয়ার মন্ত্রীসভায় অনুদান ও ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হামজা আবদি বারে।
মঙ্গলবার সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী হামজা আবদি বারে যখন তার নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেন, সে সময় আবু মনসুর নামে পরিচিত রোবোও উপস্থিত ছিলেন। সোমালিয়ার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সি (এনআইএসএ) এর সদর দপ্তর থেকে রোবোকে মুক্তি দেওয়ার একদিন পরই এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল।
রোবো ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে আটক ছিলেন। ইথিওপিয়ার আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনী সমর্থিত সোমালি সরকারী বাহিনী, দক্ষিণ-পশ্চিম কেন্দ্রীয় সদস্য রাষ্ট্রটির নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়ার জন্য বাইদোয়া শহর থেকে তাকে আটক করে।
তার গ্রেফতারের পর বাইদোয়াতে প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু হয়। তার সমর্থকরা আঞ্চলিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, ওই সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়।
মন্ত্রিসভার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন, উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সালাহ আহমেদ জামা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আবশির ওমর হুরুসে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে আবদুলকাদির মোহাম্মদ নুর, যিনি বর্তমানে এই পদেই বহাল রয়েছেন।
আল-শাবাব তৈরির আগে, রোবো আফগানিস্তানে আল-কায়েদার সাথে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
পাঁচ বছর আগে, তিনি ভিওএ-এর সোমালি রিপোর্টার হারুন মারুফকে, ইনসাইড আল-শাবাব বইয়ের জন্য একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ এ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার সময় তিনি আফগানিস্তানের আল-কায়েদা শিবিরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, এবং হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাবার খবর শুনে ক্যাম্পের সদস্যদের আনন্দ উল্লাস করতে দেখেছিলেন।
রোবো আল-শাবাবের অফিসিয়াল মুখপাত্র এবং পরে গ্রুপের ডেপুটি লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে, যুক্তরাষ্ট্র আল-শাবাবকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করে। ২০১২ সালে, যুক্তরাষ্ট্র রোবো-কে ধরিয়ে দিতে তথ্যের জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কারের ঘোষণা করেছিল, যদিও সেই ঘোষণাটি পরে ২০১৭ সালের জুনে প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৮ সালের আগস্টে আল-শাবাব হুদ্দুরের দক্ষিণে তার নিজ গ্রামে আবালের ঘাঁটিতে হামলার পর, রোবো সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম রাজ্যের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। অনেক পর্যবেক্ষক তাকে জনপ্রিয় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন, কারণ তারা ভেবেছিলেন যে তিনি আল-শাবাবের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু সরকার তাকে নির্বাচন করতে বাধা দেয়, যা কেন্দ্রীয় সরকারপন্থী প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদিয়াজিজ হাসান লাফতাগারিনকে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে।
সোমালি সরকার তাকে আটক করার সিদ্ধান্তকে এই যুক্তি দিয়ে সমর্থন করেছে যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনি সমস্ত পূর্বশর্ত পূরণ করেননি। এছাড়া তারা বলেছে, আল-শাবাবের সাথে তার পূর্ব সদস্যতার জন্য তিনি এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের দ্বারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন।
প্রথমে তাকে নিসার সদর দফতরে আটক করা হয়। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে তাকে কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে ভিওএ সোমালি সার্ভিসের সাথে এক সাক্ষাত্কার দেওয়ার পর তাকে আবারও নিসা সদর দফতরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আল-শাবাব ছাড়ার পর তিনি প্রথম যে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন, তাতে তিনি বলেছিলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়ার জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। তার সাথে যা ঘটেছে, তাকে তিনি "অপহরণ" এবং তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “আমি সবসময় আমাদের জনগণ এবং আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত আছি। আমি কিছুতেই হতাশ হবো না; এবং আমৃত্যু আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব।"