বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানে আমেরিকান হামলায় আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হওয়ার ঘটনা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগীদের উপর সামান্য হলেও প্রভাব ফেলবে।
আল-জাওয়াহিরি গত সপ্তাহান্তে আফগানিস্তানের কাবুলে আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন বলে, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেন।
সিরিয়ায়, যেখানে আল-কায়েদা দেশটির দশকব্যাপী সংঘাতের সময় বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে, সেখানে বেশ কয়েকজন নেতা আল-জাওয়াহিরির মৃত্যুতে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গ্রুপের আবু আবদুল্লাহ আল-শামি নামের একজন উচ্চ-পদস্থ নেতা, মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামের অনলাইন চ্যাট রুমে আল-জাওয়াহিরির মৃত্যু উপলক্ষ্যে তাঁর প্রশংসা করে একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন।
পূর্বে আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত এইচটিএস, একটি শক্তিশালী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, যারা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এইচটিএস যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর, ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই গোষ্ঠীটি সিরিয়ায় আল-কায়েদার প্রধান সহযোগী ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা সত্ত্বেও, সিরিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো তাদের আল-কায়েদা দ্বারা অনুপ্রাণিত মতাদর্শ এখনো বজায় রেখেছে।
সাদারাদিন কিন্নো নামে সিরিয়ার একজন গবেষক, যিনি দেশটির ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি বলেন, "এ কারণেই আল-জাওয়াহিরির মতো একজনের মৃত্যু, সিরিয়ার জিহাদি আন্দোলনের জন্য একটি প্রতীকী ধাক্কা হিসাবে দেখা যেতে পারে।"
ইদলিবে অবস্থিত অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী যেমন হুরাস আল-দিন এবং সিরিয়ার তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছে।
কিন্নো ভিওএ-কে বলেছেন, " সিরিয়ায় এই গ্রুপগুলি যেভাবে কাজ করছে, তার উপর জাওয়াহিরির মৃত্যু সরাসরি কোনও প্রভাব ফেলবে না, কারণ তাদের সাংগঠনিক কাঠামো কেন্দ্রীয় আল-কায়েদার থেকে অনেকাংশে স্বাধীন।"
অন্যান্য বিশ্লেষকরা বলছেন, আল-জাওয়াহিরি ছিলেন আল-কায়েদার একটি পুরানো প্রজন্মের প্রতীক, যা কীনা সিরিয়া এবং অন্যত্র আজকের চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির সাথে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রাসঙ্গিক নয়।
ওয়াশিংটনের নিউলাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিরিয়া বিশেষজ্ঞ নিকোলাস হেরাস বলেছেন, আল-কায়েদা-অনুপ্রাণিত তরুণ প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে আল-জাওয়াহিরিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পুরানো প্রজন্মের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন।
তিনি বলেন, আল-জাওয়াহিরির উত্তরসূরি সিরিয়ায় এবং বিশ্বের অন্যত্র আল-কায়েদার সহযোগীদের ওপর ভিন্ন কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা এখন দেখার বিষয়।