আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবান সরকার বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার নিন্দা করেছে। গত সপ্তাহান্তের ওই হামলায় কাবুলে পলাতক আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হন। তালিবান বলছে, তাদের কাছে এখনও হামলার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিষয়ে তাদের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে গোষ্ঠীটি।
তালিবানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী আব্দুল সালাম হানাফি, কাবুলে সংবাদদাতাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সন্ত্রাসীদের মূল হোতাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিতকরণের পর, ইসলামপন্থী শাসকদের এটাই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
কাবুলের একটি বিলাসবহুল এলাকায় জাওয়াহিরির উপস্থিতি তালিবানের জন্য একটি অপমানজনক আঘাত হিসাবে দেখা হয়, যারা প্রায় এক বছর আগে ক্ষমতা দখল করে এবং তাদের শাসনের পক্ষে আন্তর্জাতিক বৈধতা খুঁজছে।
হানাফিকে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আল-জাওয়াহিরির হত্যার বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বলেন, “আমরা এখনও এর বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে জানিনা। আমরা যা জানি তা হল, এখানে একটি বিমান হামলা হয়েছে এবং আমাদের ইসলামিক আমিরাত এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।”
উল্লেখ্য, তালিবান তাদের সরকারকে আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত বলে অভিহিত করে।
হানাফি যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে তার দেশের "সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক আইন এবং দোহা চুক্তি" লঙ্ঘন বলে ‘এর নিন্দা করেছেন। তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত তালিবান এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার চুক্তির কথা উল্লেখ করেন, যেখানে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিদেশী সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করার জন্য এবং তৎকালীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে আফগানিস্তানে আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদীদের কাজ করা থেকে বিরত রাখার জন্য বলা হয়েছিল।
হানাফী বলেন, “ইসলামিক আমিরাত বারবার [বিশ্বকে] বলেছে, প্রতিবেশী এবং অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে কাউকে আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া আমাদের নীতি। ইসলামিক আমিরাত দৃঢ়ভাবে এই নীতির পাশে আছে।”
তবে ওয়াশিংটন ২০২০ চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য তালিবানকেই দায়ী করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, "কাবুলে আল-কায়েদার নেতাকে আতিথেয়তা ও আশ্রয় দিয়ে, তালিবান দোহা চুক্তির চরম লঙ্ঘন করেছে। তারা বিশ্বকে বারবার আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা আফগান ভূখণ্ডকে অন্য দেশের নিরাপত্তার হুমকির জন্য সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেবে না।"
যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার বলেছেন, ৭১ বছর বয়সী মিশরীয় জিহাদি নেতা আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের শেরপুর এলাকায় একটি তিনতলা বাড়ির বারান্দায় ছিলেন, যখন একটি মানববিহীন বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র তাকে আঘাত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, আল-জাওয়াহিরিকে তথাকথিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের সিনিয়র সদস্যরা কাবুলে আশ্রয় দিয়েছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্ক হচ্ছে তালিবানের মধ্যে একটি শক্তিশালী জঙ্গি গোষ্ঠী, যাদের সাথে আল-কায়েদার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নেটওয়ার্কের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, যিনি তালিবান সরকারের ক্ষমতাধর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার মাথার জন্য ১ কোটি ডলার পুরস্কার রয়েছে।
ওয়াশিংটন এবং বৃহত্তর বিশ্ব তালিবান শাসনকে বৈধতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই পদক্ষেপ কট্টরপন্থী গোষ্ঠীটির কর্ম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশাধিকার এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি বহাল রাখার বিধিনিষেধ শিথিল করার সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র তালিবানের উপর কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তাদের কাছ থেকে আফগানিস্তানের বৈদেশিক আর্থিক রিজার্ভের প্রায় ৭০০ কোটি ডলার অর্থ আটকে রেখেছে।