ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচকরা বৃহস্পতিবার তেহরানের ভঙ্গুর পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে মাসব্যাপী, পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু করেছেন, কারণ আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা রিপোর্ট করেছেন যে ঐ ইসলামিক প্রজাতন্ত্র তার ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধিকরণ প্রসারিত করছে।
ভিয়েনা আলোচনার পুনঃসূচনা হয় যখন হঠাৎ করে বুধবার এই বৈঠক ডাকা হয়। বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের ২০১৫ সালের চুক্তির অংশ ছিল এমন সকল দেশের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা চুক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান সংশয় প্রকাশ করার সময় আলোচনাটি শুরু হয়। ইইউ-এর শীর্ষ কূটনীতিক সতর্ক করেছেন যে " আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপোষের সময় ফুরিয়ে গেছে।"
ইরানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের শীর্ষ আলোচক আলী বাঘেরি কানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী এনরিক মোরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অন্যান্য আলোচনার মতো, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের সাথে আলোচনা করবে না। বরং মোরার মাধ্যমে দুই পক্ষ কথা বলবে।
ইরান বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি রব ম্যালিও পাশে ছিলেন, বুধবার টুইট করেছেন যে "আমাদের প্রত্যাশা যাচাই করা হচ্ছে।"
মোরা বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানভের সাথেও দেখা করেছেন, যিনি আলোচনায় মস্কোর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। উলিয়ানভও পৃথকভাবে বাঘেরি কানির সাথে দেখা করেছিলেন।
উলিয়ানভ টুইটারে লিখেছেন, "সব সময়ের মত এবারও আমরা অবশিষ্ট সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে একটি খোলামেলা, বাস্তববাদী এবং গঠনমূলক মতামত বিনিময় করেছি।"
কিন্তু আলোচনায় গিয়ে ইরান একটি সর্বোচ্চবাদী অবস্থান নিয়েছে। তাদের রাষ্ট্র-চালিত আইআরএনএ সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে, তেহরান অস্বীকার করেছে যে তাদের পূর্বশর্ত, আমেরিকা ইরানের আধা-সামরিক বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন এর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি তারা ত্যাগ করেছে। এই বিষয়টিই এখন প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, রাশিয়া এবং চীনের সাথে পারমাণবিক চুক্তি সই করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের নজরদারিতে ইরান ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধিকরণ সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল।
২০১৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, বলেছিলেন যে তিনি একটি কঠোর চুক্তির জন্য আলোচনা করবেন, কিন্তু তা ঘটেনি। ইরান এক বছর পর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা শুরু করে।
আইএইএ-এর সর্বশেষ গণনা অনুসারে, ইরানে প্রায় ৩,৮০০ কিলোগ্রাম (৮,৩৭০ পাউন্ড) বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে। অপ্রসারণ বিশেষজ্ঞদের জন্য আরও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে যে ইরান এখন ৬০ ভাগ বিশুদ্ধতা পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে , এটি এমন একটি স্তর যাতে তারা আগে পৌঁছায়নি। যা কিনা অস্ত্র-স্তরের ৯০ শতাংশের মাত্র এক ধাপ পেছনে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ইরানের অন্তত একটি বোমা তৈরীর জন্য জ্বালানিতে পুনরায় প্রক্রিয়াকরণের জন্য ৬০ শতাংশ পরিমাণ যথেষ্ট বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে।