উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন প্রমাণ দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত সরকার এমন আভাস দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েন করা ‘থাআড’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যবহার সম্প্রসারিত করার কথা বিবেচনা করতে ইচ্ছুক।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন যে, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হ্রাসে চীনের অনাগ্রহের আলোকে, দক্ষিণ কোরিয়ার এমন পদক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত। দক্ষিণ কোরিয়ার এই পদক্ষেপ বিদ্যমান নীতিকে বিপরীতমুখী করবে এবং তা চীনের কঠোর বিরোধীতার সম্মুখীন হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় মুন জে-ইন এর নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী প্রশাসনটি, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আর কোন টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি বা থাআড) নামক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা মোতায়েন করা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। চীনকে প্রসন্ন করতে ২০১৭ সালে এমন নীতি অনুসরণ করে দক্ষিণ কোরিয়া। সে সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া থাআড ব্যবস্থাটি পেয়েছিল। এই ব্যবস্থাটি স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে সক্ষম এবং তা সারা বিশ্বজুড়েই মোতায়েন করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সে সময়ের নীতিটি “থ্রি নোস” (তিনটি না) হিসেবে পরিচিত। এই নীতি অনুযায়ী অতিরিক্ত আর কোন থাআড মোতায়েন না করতে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ না করতে, এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথে কোন ত্রিপাক্ষিক সামরিক জোট গঠন না করতে সুপারিশ করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে চীন অর্থনৈতিক এক প্রতিশোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর, মুন এর প্রশাসন এই “থ্রি নোস” নীতিটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রস্তাব করেছিল। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য, তার আগের বছর দক্ষিণ কোরিয়া থাআড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি মোতায়েনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
২৫ জুলাইয়ে এক সংসদীয় শুনানিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক জিন বলেন, “থ্রি নোস কোন প্রতিশ্রুতি বা চুক্তি ছিল না যা আমরা চীনের সাথে করেছিলাম, বরং সেটি আমাদের অবস্থানের একটি ব্যাখ্যা ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের জন্য উদ্বেগজনক হওয়া সত্ত্বেও আমরা থ্রি নোস নীতি বজায় রাখব - চীনের এমন আহ্বানে সম্মত হওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর।”
এর পাল্টা জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান ২৭ জুলাই তারিখে বলেন, “কোন প্রতিশ্রুতি দিলে সরকার বদল হওয়া সত্ত্বেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিৎ।”