চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে, শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারেই ৯২টি চা বাগান। সব চা শ্রমিকরা অংশ নিচ্ছে এই ধর্মঘটে।
এদিকে, শুক্রবার (১২ আগস্ট)সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও, ফিনলে টি কোম্পানি, নাহার, এম আর খান, ইস্পাহানি, মির্জাপুর, জঙ্গল বাড়ি, মাজদিহি চা বাগান; সদর উপজেলার হামিদিয়া, প্রেম নগর, মৌলভী চা বাগান; কমলগঞ্জের কুরমা, চাম্পারায়, ফুলবাড়ি ও নূরজাহান, ভাড়াউড়া চা বাগানসহ রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার বিভিন্ন চা বাগানে চতুর্থ দিনের মতো সকাল ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা কর্মবিরতি, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে চা শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, “শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে অনির্দিষ্ঠকালের জন্য বাগানে কাজ বন্ধ রেখে পূর্ণ দিবস ধর্মঘট পালন করবে শ্রমিকরা। প্রতিটি উপজেলায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করবে।”
চা শ্রমিকরা জানান, তাদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে প্রতি বছর চা শিল্পে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালে উৎপাদন হয়েছে ৯৬ মিলিয়ন কেজি চা, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড। কিন্তু তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন আজও হয়নি। চা শ্র্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দুটি চুক্তি বাস্তবায়ন করা হলেও, বারবার সংকটে পড়ছেন চা শ্রমিকরা।
চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত দেড় লক্ষাধিক শ্রমিক। তাদের মজুরি দৈনিক ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত ৯২টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৭টি বাগানে কর্মবিরতি পালন করে চা শ্রমিকরা। তাদের দাবি না মানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে চা শ্রমিকরা।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, “বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা একাধিকবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও, মালিকরা চুক্তি ভঙ্গ করছেন।”
“চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত তিন বছর ধরে নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে চা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছি;” জানান চা শ্রমিকদের নেতা বিজয় হাজরা।