ছুরি-হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর,সালমান রুশদি শনিবারও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পাশ্চাত্যে তার প্রশংসার বন্যা বয়ে গেলেও, ইরানে তিনি ছিলেন নিন্দিত।
তার এজেন্ট অ্যান্ডরু ওয়াইলি শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, ৭৫ বছর বয়সী রুশদির যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তার একটি হাত ও একটি চোখের স্নায়ু কেটে গেছে। তাকে ভেন্টিলেশনে(কৃত্রিম শ্বসন ব্যবস্থা) রাখা হয়েছে।
পুলিশ হামলার জন্য সন্দেহভাজন, হাদি মাতার (২৪) নামে ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে। তাকে রুশদির ওপর হামলার পর চৌতাউকোয়া ইনস্টিটিউশন থেকে গ্রেফতার করে। ইনস্টিটিউশনটি একটি অলাভজনক শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে সালমান রুশিদির বক্তৃতা করার কথা ছিল।
হাদি মাতারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ে।তার পিতা মাতা লেবাননের মানুষ। তারা দক্ষিণ লেবাননের একটি সীমান্ত গ্রাম ইয়ারুন থেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এ কথা জানিয়েছেন মেয়র আলি তেহফে।
১৯৮৮ সালে, রুশদির উপন্যাস "দ্য স্যাটানিক ভার্সেস" প্রকাশিত হওয়ার পর, তার প্রাণনাশের হুমকি সৃষ্টি হয়। অনেক মুসলমানের কাছে এটা ‘খোদাদ্রোহীতা’ বলে বিবেচিত হয়। তারা এই উপন্যাসের একটি চরিত্রকে নবী মুহম্মদ (সঃ)-এর অপমান বলে মনে করেন। এছাড়া আরও আপত্তি রয়েছে তাদের। ১৯৮৯ সালে ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি, রুশদির মৃত্যুর আহ্বান জানিয়ে একটি ফতোয়া বা জারি করেছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।
ইরানের ধর্মভিত্তিক সরকার এবং এর রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম এই হামলার বিষয়ে কিছুই িবলেনি। তেহরানে, এপির সঙ্গে সাক্ষাতকারে, কিছু ইরানী এই লেখকের ওপার চালানো হামলার প্রশংসা করেন।তার বিশ্বাস করেন যে, এই লেখক ইসলামকে কলঙ্কিত করেছে। অনেকে এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে, এই ঘটনা তাদের দেশকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে।
জাতিসংঘের কাছে এই হামলার ঘটনা ‘একটি শান্ত শহরকে অযাচিত কোলাহলে’ ভরে দেয়ার মতো। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন যে, মতের মুক্ত প্রকাশ এবং মুক্ত মতকে সহিংসতা দিয়ে মোকাবেলা করা উচিৎ নয়।
হোয়াইট হাউস থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এই হামলা-কে 'নিন্দনীয়' বলে বর্ণনা করে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন রুশদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে।
ঔপন্যাসিক এবং রুশদির বন্ধু ইয়ান ম্যাকইওয়ান বলেন, রুশদি মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং উদারনৈতিকতার মুখপাত্র ছিলেন। তিনি এই হামলাকে "চিন্তা ও বাক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ" হিসাবে উল্লেখ করেন।
রুশদি তার ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বুকার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস "মিডনাইটস চিলড্রেন" দিয়ে খ্যাতি অর্জন করে। আর "দ্য স্যাটানিক ভার্সেস" প্রকাশিত হওয়ার পর তার নাম বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে।