অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অর্থ পাচার নিয়ে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিব্রতকর: হাইকোর্ট


বাংলাদেশের ১০০০ টাকার নোট।
বাংলাদেশের ১০০০ টাকার নোট।

সুইস ব্যাংকের কাছে অর্থ জমা নিয়ে বাংলাদেশ কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের এমন বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

রবিবার (১৪ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। হাইকোর্ট বলেছেন, “ সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে থাকা তথ্য হলফনামা আকারে আদালতে উপস্থাপনের জন্য পরবর্তী দিন রাখলাম।”

শুনানির একপর্যায়ে আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষকে তাদের আজকের উপস্থাপিত বক্তব্য এফিডেভিট আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে, এই বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২১ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়ার আবেদন করেন। তিনি রবিবার হাইকোর্টকে বলেন, “বিদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দুদক ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২’ এবং‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ ’এর বিধানাবলীর আলোকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে নির্দিষ্ট ছক মোতাবেক অধিযাচনপত্র পাঠায়। এর আলোকে, বিএফআইইউ সংশিষ্ট দেশের ফিইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে।”

আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, “দুদক ২০১৪ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত তিনটি অনুসন্ধান/তদন্ত সংক্রান্ত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য, সুইজারল্যান্ড থেকে সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউ’কে অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ দুদককে জানায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তির বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে যে ঐ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।”

এছাড়া অন্য দুটি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ থেকে এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান দুদক আইনজীবী।

হাইকোর্টকে তিনি আরও বলেন, “বিএফআইইউ বিদেশি ফিইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে যে তথ্য পাঠায়, তা এগমন্ড চার্টার-এর শর্তানুযায়ী গোপনীয় এবং কেবল ইন্টেলিজেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উক্ত তথ্য আলামত হিসেবে কোনো বিচারিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায় না।”

রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক হাইকোর্টকে বলেন, সুইজারল্যান্ডের মান্যবর রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। তার বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। এবিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।”

এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, ২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ। ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর ঐ একজনের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়েছে বিএফআইইউ।

‘সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা সম্পর্কে সরকার নির্দিষ্ট তথ্য চায়নি’; গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ পড়েছেন জানিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে বাংলাদেশ সরকার সুইস ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য না চাওয়ার বক্তব্যের বিষয়ে রবিবারের মধ্যে দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন। সে অনুযায়ী দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ রবিবার আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

XS
SM
MD
LG