অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ব্যাচেলেট


জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করছেন।১৬ আগস্ট ২০২২। (ছবি- এএফপি)
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করছেন।১৬ আগস্ট ২০২২। (ছবি- এএফপি)

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাবের ফলে খাদ্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রোহিঙ্গাদের সঙ্কট মোকাবিলায় সহায়তার জন্য তাদের সমর্থন বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, "আমি জোর দিয়ে বলব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে না এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে; এমনকি তারা তাদের সমর্থন বাড়াতে পারে কিনা তাও দেখবে"।

তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও তারা যে সমস্যাগুলো দেখছেন, তার মধ্যে একটি হলো খাবারের দাম বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, "এবং এর অর্থ হল যে একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আগে বেশি খাবার কিনতে পারত, এখন কম কিনতে পারে। এবং এটি কক্সবাজারের মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করছে"।

মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, "আমি অবশ্যই বলব তারা (রোহিঙ্গারা) সবাই বলেছেন: আমরা ফিরে যেতে চাই। তবে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে যখন আমাদের একটি পরিচয় থাকবে আমরা তখন ফিরে যেতে চাই। যখন আমাদের অধিকারকে সম্মান করা হবে, আমরা আবার আমাদের জীবিকা অর্জন করতে পারব, আমাদের সম্পত্তি থাকবে এবং আমরা বুঝতে পারব যে আমরা আমাদের দেশের অংশ"।

তিনি বলেন, "জাতিসংঘ তাদের (রোহিঙ্গাদের) সমর্থন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। কিন্তু আমাদের সমস্যার গভীর শিকড় মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের এটি (সমস্যা) মোকাবিলা করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে যাতে তারা (রোহিঙ্গারা) নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে"।

পাঁচ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের হাইকমিশনারের সঙ্গে তাদের উদ্বেগ ও আশার কথা জানিয়েছেন।

১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া বেশ কয়েকটি শিবির পরিদর্শন করার পরে বাচেলেট রোহিঙ্গাদের নারী দল, ধর্মীয় নেতা ও যুব গোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা করেন।

তিনি জানান, তারা তাদের দুঃখ-কষ্ট-বেদনা, কিভাবে তারা তাদের সবকিছু ও জীবিকা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে এবং তাদের অনেকেই নিজেদের ভালোবাসার মানুষদের হারিয়েছে এবং কীভাবে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়ে কক্সবাজার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে তা জাতিসংঘ ও অন্যান্য অংশীদারদের কাছে বর্ণনা করেছেন।

এছাড়াও ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা শিক্ষা গ্রহণ করতে তাদের ইচ্ছার কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে রবিবার থেকে বাংলাদেশে সরকারি সফরে এসেছেন ব্যাচেলেট। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের বাংলাদেশে এটিই প্রথম সরকারি সফর।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী

ওদিকে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (১৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে শেখ হাসিনা বলেন, "রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের সেখানে ফিরিয়ে নিতে হবে"।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "মিয়ানমার তাদের রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্বীকার করছে না, আবার তাদের স্বদেশে ফিরিয়েও নিচ্ছে না"।

ব্যাচেলেট বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের শিক্ষার এবং কাজের সুযোগ বাড়ানো প্রস্তাব করেন।

কক্সবাজারে এ ধরনের উদ্যোগ সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সফররত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে জানান, ভাষানচরে এমন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সেখানে তাদের উন্নত মৌলিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। যেখানে ইতোমধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, তারা উভয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

XS
SM
MD
LG