অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নির্ধারিত দুই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেলেন বাংলাদেশের আইজিপি


বাংলাদেশের পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ
বাংলাদেশের পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ
জাতিসংঘের চিফস অব পুলিশ সামিটে (ইউএনসিওপিএস ২০২২)-এ যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত দুই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন।

বৈঠকে অংশ নিতে ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আইজিপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি রবিবার (২৮ আগস্ট) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আইজিপিকে শুধুমাত্র সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যেই ভিসা দেয়া হয়েছে।”

প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিয়ান ওয়াজেদ ও সহকারী মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাসুদ আলম।

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত ইউএনসিওপিএস ২০২২-এ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, পুলিশ প্রধান, আঞ্চলিক ও পেশাদার পুলিশ সংস্থাগুলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বেনজির আহমেদ-সহ সাত সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

বেনজির দেশের পুলিশ প্রধান হওয়ার আগে র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বক্তব্য

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পিত সফর প্রসঙ্গে ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ১৭ আগস্ট দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, "যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভিসা রেকর্ড খুবই গোপনীয়; সুতরাং, আমরা কোন ব্যক্তির ভিসার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি না। কেউ ভিসা পাবার জন্য যোগ্য কি না, সে বিষয়েও আমরা আগে থেকে কিছু অনুমান করতে পারি না।"

জাতিসংঘ আয়োজিত সম্মেলনে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সীমিত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, জাতিসংঘের সদর দফতর চুক্তির অধীনে, জাতিসংঘের স্বাগতিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের জাতিসংঘ সদর দফতরে ভ্রমণের সুবিধা দিতে বাধ্য। জাতিসংঘ সদর দফতর চুক্তির অধীনে আমরা আমাদের বাধ্যবাধকতাগুলিকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখে থাকি।"

তবে মুখপাত্র বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, "র‍্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক নেতাদের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। আমরা র‌্যাবের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।"

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‍্যাব

উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এ ছাড়া র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG