যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ান কোনো মুদি দোকান ভ্রমণ অনেকটা প্রাচ্য ভ্রমণের মতোই। থাইল্যান্ডের আচারযুক্ত সরিষার শাক, কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান এবং চীন থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে তৈরি করা নুডলস, শুকনো মাশরুম কিংবা ফলের প্যাকেট — এগুলো যে কোনো এশিয়ান সুপারমার্কেটে গেলেই পাওয়া যায়।
এর মধ্যে কয়েকটি দোকান মানবাধিকার গবেষকদের নজরে এসেছে।
এই সপ্তাহে প্রকাশিত ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রজেক্টের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন এলাকার বাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অনলাইন খুচরা বিক্রেতারা জিনজিয়াং-এ চাষ এবং প্রক্রিয়াজাত করা ৭০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের লাল খেজুর বিক্রি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে এসব লাল খেজুর উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত শ্রমিকরা সেখানে জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হচ্ছে।
ডিসেম্বরে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএফএলপিএ) আইনে স্বাক্ষর করেন। জুন মাসে ওই আইনের প্রয়োগ শুরু হয়। চীনের জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে উত্পাদিত পণ্যগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, যদি আমদানিকারকরা প্রমাণ করতে পারেন যে, সেগুলি জোরপূর্বক শ্রম দ্বারা তৈরি করা হয়নি, কেবল তাহলেই সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা যাবে।
'উইঘুর জোরপূর্বক শ্রমের ফল: আমেরিকান মুদি দোকানে নিষিদ্ধ পণ্য' শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা খাদ্য বিক্রেতা এবং ভোক্তারা জোরপূর্বক শ্রম এবং অন্যান্য নৃশংসতার সাথে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি নেবে” যতক্ষণ জিনজিয়াং থেকে লাল খেজুরগুলি আমেরিকান দোকানের তাকগুলিতে সাজানো থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ফেব্রুয়ারি এবং আগস্ট ২০২২ এর মধ্যে, আমরা ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন এলাকায় এক ডজন আন্তর্জাতিক মুদি দোকানে তদন্ত করেছি এবং সাতটি দোকানে পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে পাওয়া লাল খেজুরের পণ্যগুলি চিহ্নিত করেছি। আমরা অনলাইন আন্তর্জাতিক মুদি দোকানগুলিও পরীক্ষা করেছি, যেগুলি উইঘুর অঞ্চল থেকে ডিসি এলাকায় লাল খেজুরের পণ্যগুলি প্রেরণ করে।"
বেশিরভাগ উইঘুররা উইঘুর অঞ্চলকে জিনজিয়াং এর পরিবর্তে পূর্ব তুর্কিস্তান বলতে পছন্দ করে, এই নাম চীনাদের দেওয়া।
প্রতিবেদন অনুসারে, অ্যামাজন, ইবে এবং ওয়ালমার্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন খুচরা বিক্রেতারা জিনজিয়াং থেকে আনা লাল খেজুর বিক্রি করে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, "অন্তত ১৫টি আমেরিকান কোম্পানি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি বিতরণের জন্য লাল খেজুরের পণ্য আমদানি করে। যার মধ্যে রয়েছে ব্লুমিংটন ইম্পোর্ট, গ্রোল্যান্ড ইনক, এইচএন্ডসি ফুড ইনক, ওসিএম গ্লোব ইনক, এবং ট্রিস্টার ফুড হোলসেল কোং, ইনকর্পোরেটেড।"
ভিওএ রিপোর্টে উল্লিখিত এইচএন্ডসি ফুড ইনক এবং ওসিএম গ্লোব ইনকসহ কয়েকটি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেছে, কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি।
প্রতিবেদনের লেখকরা বলেছেন, তারা রিপোর্টে নাম থাকা দোকান এবং পরিবেশকদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন, তারা মাত্র কয়েকটি ইমেলের উত্তর পেয়েছে। বাকীরা হয় সরাসরি কোনও উত্তর দেয়নি কিংবা শুধুমাত্র ইমেল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনের লেখক, নুজিগুম সেটিওয়াল্ডি, লাল খেজুরের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা সনাক্ত করতে বিশ্বব্যাপী, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্য ডেটা ব্যবহার করেছেন।