বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট, ঝালকাঠি, ভোলা, সাতক্ষীরা ও খুলনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাটে গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে ভৈরব, বলেশ্বর,পানগুছি ও পশুর নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট বেড়েছে এবং সুন্দরবনে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, “স্থল নিম্নচাপটি বর্তমানে ভারতের দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশে ও এর পাশ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পূর্ণিমা ও স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল এক থেকে দুই ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।”
নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীর জোয়ারে ভোলার নিম্নাঞ্চল দুই থেকে তিন ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলসহ বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। জোয়ারের পানিতে ইলিশা ফেরিঘাটের গ্যাঙওয়ে ডুবে গিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
ভোলা আবাহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, রবিবার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোলায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।সাতক্ষীরার আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধঁ ভেঙে ২০০ বিঘা মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে গেছে। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুরে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবনের সৃষ্টি হয়।
শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান যে, রবিবার থেকেই থেমে থেমে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারি বর্ষণের কারণে শতাধিক ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, “বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৫৯ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ২-১ দিন আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি অব্যহত থাকতে পারে।”ঝালকাঠির বিষখালী ও হলতা নদীর পানি ৩-৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কাঠালিয়া উপজেলার অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৭টি গ্রাম ও শতাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্লাবিত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে কাঠালিয়া গ্রামের বিষখালী নদীর তীরবর্তী রাস্তা ও চিংড়াখালী খালের বাঁধ।
ঝালকাঠি উপজেলা পরিষদের সবগুলো অফিস ভবন, নির্বাহী অফিসারের বাস ভবন, কাঠালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, কাঠালিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিকল্যাণ কেন্দ্র, ছৈলার চর পর্যটন কেন্দ্র, কাঠালিয়া লঞ্চ ঘাট, সিকদার পাড়া, পশ্চিম আউরা জেলে পাড়া, আমুয়া হাসপাতাল ও আমুয়া বন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থান ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিষখালী ও হলতা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের সব কয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলা সদরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া, নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নবনির্মিত শহর রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়েছে।