অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


ভারতে সরকারি সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন।
ভারতে সরকারি সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, তিন বছর পর তার সাম্প্রতিক ভারত সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি সফর নিয়ে বুধবার বিকালে গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা গোটা সফরজুড়ে ভালো প্রতিবেশী হিসেবে সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ভারতের আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানে আমার সফরের সময় (৫-৮ সেপ্টেম্বর) গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বাস্তবায়িত হলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে।”

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্বোপরি পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে, এই সফর উভয় দেশকে একটি নতুন পথে এগিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া শিগগিরই একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে।”

“ঢাকা ও নয়াদিল্লি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উভয়ই আন্তরিকতা তুলে ধরে সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর থেকে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে;” জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরের অনেকগুলো অর্জন তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে; কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে। অন্য বিষয়গুলো হলো; সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ঐকমত্য, ভারত ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তসীমান্ত রেল যোগাযোগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হওয়া এবং চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধ করার আগে, বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া।

বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “অভিন্ন নদীগুলোর দূষণের ক্ষেত্রে, নদীগুলোর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া হবে। রেল পরিষেবার মান বাড়ানোর জন্য তথ্য-প্রযু্ক্তির সমাধান বিনিময় এবং ২০২২ সালের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি সাক্ষরের জন্য কাজ শুরু করতে দু’দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে, দুই পক্ষ সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ কুশিয়ারা অভিন্ন নদী থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি পাবে এবং এর ফলে রহিমপুর লিংক ক্যানেলের মাধ্যমে পাঁচ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ প্রযুক্তি, সবুজ অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে।”

“আমরা বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে ভারতের প্রস্তাবিত দ্বিতীয় গেটের নির্মাণ কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে সম্মত হয়েছি। এই কাজটি শুরু করতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই ভারত সফর করবে;” উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্বালানি সহযোগিতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসামের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে জ্বালানি (ডিজেল) পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর-এ প্রবাহিত হবে। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প’ এর অধীনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৯ এপ্রিল, ২০১৮ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ভারত সরকারের অর্থায়নে মোট ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার (বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতীয় অংশে পাঁচ কিলোমিটার) পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন সম্পন্ন হয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এখন রেলওয়ে ওয়াগন-এর মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০-৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হলে ভারত থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।”

এলএনজি আমদানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা এলাকায় বিপুল গ্যাসের চাহিদার কথা চিন্তা করে সরকার একটি আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে রেগ্যাসিফাইড এলএনজি (আরএলএনজি) আমদানির কথা বিবেচনা করছে। শেষ পর্যন্ত, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড ( আইওসিএল) এবং এইচ-এনার্জি’র প্রস্তাবের বিপরীতে, পেট্রোবাংলা উভয় সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্বাক্ষর সই করেছে।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভাষা ও সংস্কৃতির মিলের কারণে আমাদের সম্পর্ক গভীর হয়েছে।এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও স্বাধীনতার পর সহযোগিতা এই বন্ধুত্বকে বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।”

XS
SM
MD
LG