গত মাসে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। অনুপযুক্ত পোশাকের জন্য ইরানের নৈতিকতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। এই বিক্ষোভ কোথায় নিয়ে যেতে পারে এবং পশ্চিমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত?
ভয়ের প্রাচীর
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান বিশ্লেষক আলী ভায়েজ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, “এই মুহূর্তটি হচ্ছে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ভুলের ফল। আসলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র এবং এর নেতৃত্ব এই আন্দোলনেরও নেতা কারণ তারা সমাজের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। গত এক দশক ধরে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানি জনগণ শুধু অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে না, বরং তাদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে "।
অনেক বিক্ষোভের নেতৃত্বে নারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে তারা তাদের হিজাব ফেলে দিচ্ছেন এবং দেশের নেতাদের প্রকাশ্য প্রতিরোধে অবমাননা করছেন।
ভায়েজ বলেন, "এটি সত্যিই চিত্তাকর্ষক যে তাদের জন্য ভয়ের প্রাচীরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তাদের হারানোর কিছু নেই এবং তাই তারা তাদের অবস্থানে অটল থাকতে ইচ্ছুক" ।
অতীতের প্রতিবাদ
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিস’এর বিশ্লেষক বেহনাম বেন তালেবলু বলেছেন, “কয়েক দশক ধরে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সত্ত্বেও জনশক্তি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৯ সালের সবুজ আন্দোলনের মতো অতীতের বিক্ষোভগুলি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলির উপর কেন্দ্রীভূত ছিল, কিন্তু ক্ষোভ এখন অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং ঘরোয়া দমন-পীড়নের মধ্যে সব রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করেছে।
তালেবলু ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "শাসনের কোন একটি বিষয়ের পক্ষে ওকালতি করার পরিবর্তে, এই জনগণ এখন বলছে যে তারা এই প্রশাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।"
পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া
এই বিক্ষোভ নিয়ে পশ্চিমের প্রতিক্রিয়া কেমন?
ব্রিটেন গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাকে অনুসরণ করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের সিনিয়র ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তালেবলু বলেন, "এটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে বিস্তৃত করা দরকার, সেইসাথে স্বায়ত্তশাসিত নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা রয়েছে এমন দেশগুলিকেও যুক্ত করা উচিত, তা নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো ফাইভ আইস সদস্য হোক বা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশীদার হোক"।
ফাইভ আইজ হল অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গোয়েন্দা শেয়ারিং জোট।
পারমাণবিক চুক্তি
২০১৫ সালের জেসিপিওএ পারমাণবিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলি তেহরানের সাথে আলোচনা করার সময় এই বিক্ষোভগুলি চলছে । ঐ চুক্তি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতার বিনিময়ে কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। জেসিপিওএ হল জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন এই যুক্তি দিয়ে যে এটি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী প্রক্সিদের সমর্থনের অভিযোগ রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। চুক্তির সমর্থকরা বলছেন যে এটির একমাত্র লক্ষ্য ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখা এবং অন্যান্য উদ্বেগগুলি আলাদাভাবে মোকাবেলা করা উচিত।
তেহরান দাবি করে আসছে যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে চলছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের দমন-পীড়নের নিন্দা করলেও বলেছেন ফ্রান্স পারমাণবিক বিস্তার রোধে লড়াই করছে।
ম্যাক্রোঁ বুধবার ফ্রান্স-টু টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন, “ফ্রান্স ইরানী শাসকদের নেতৃত্বে আজকের দমন-পীড়নের নিন্দা করে এবং আমরা এই নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তারা একটি সার্বভৌম জনগণ তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে”।