অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে: বলছেন বিশেষজ্ঞরা


বাংলাদেশের ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। (ফাইল ছবি)
বাংলাদেশের ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশে প্রতিদিন যেভাবে ডেঙ্গু বাড়ছে, তাতে মানুষের মধ্যে এখন এই সংক্রমক রোগ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করেও চাপ সামলাতে পারছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছেন অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি। চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৮৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছে, মশা নিধনে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। লার্ভা নিধনে নামকাওয়াস্তে অভিযান ও প্রচারনা চালানো হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়। এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, চলতি মাস অক্টোবরে প্রথম ১২ দিনে ১১৯ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে। তেমনি ঢাকা মেডিকেল, মুগদা জেনারেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে শয্যা সংকটে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির বলেন, “দিন দিন ডেঙ্গু যেভাবে বাড়ছে, তাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।”

তিনি বলেন, “ডেঙ্গুতে ঢাকার বাইরেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছেন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষ। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে আক্রান্তরা।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সবুর খান বলেন, “ডেঙ্গু বিস্তার সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি কমে আসে। এবার পরিস্থিতি অন্য রকম মনে হচ্ছে। অক্টোবর মাস চলছে, এখনও প্রকোপ বাড়ছে। যা উদ্বেগজনক দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এবার ডেঙ্গু প্রকোপ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বা শেষ পর্যন্ত থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে অব্যাহতভাবে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। ড্রাম-সহ বিভিন্ন কৌটা আর খানাখন্দে পানি জমে। এগুলো খুব বেশি তদারকি হয় না। ফলে, এ সব স্থানে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হয়। সিটি করপোরেশন বাসা বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু কনস্ট্রাকশনের জায়গাগুলো তো টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ যায় না, সিটি কর্পোরেশন যায় না। যে কারণে সবসময় ডেঙ্গু মশা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।”

মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কোনো গাফিলতি আছে কিনা জানতে চাইলে, ডা. সবুর খান বলেন, “সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব মশা নিয়ন্ত্রণ করা। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের গাফিলতি অবশ্যই আছে। মশা নিধনে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। লার্ভা নিধনে নামকাওয়াস্তে অভিযান ও প্রচারনা চালানো হচ্ছে।”

ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রসঙ্গে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোধে দুটি কাজ করে। প্রথমত,হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তৈরি করা। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে। আমাদের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছেন, তাদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমরা আপডেটেড রাখছি। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মৌসুমে আমরা ঢাকা মহানগরীতে সার্ভে করি। সেই রিপোর্ট আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। আমাদের নতুন সার্ভে অনুযায়ী, উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটিতেই সমানভাবে মশার উপদ্রব রয়েছে।”

ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে তিনি বলেন, “ডেঙ্গুর সংক্রমণ তখনই বাড়ে, যখন মশার সংখ্যা বাড়ে। সিটি করপোরেশন যে ভাবে কাজ করছে, এভাবে তো অভিযান পরিচালনা করে কোনো লাভ নেই। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে। ভালো করে দেখুন, এগুলোতেই মশা ডিম পাড়ে। আর নতুন এগুলো থেকে মশা জন্ম নিচ্ছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০১৯ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৯; ২০২০ মৃত্যু হয় সাত জনের। আর ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। আর, ২০২০ সালে এক লাখ আট হাজার ২০০ পিস ডেঙ্গু টেস্ট কিট (এনএস১) বিতরণ করা হয়েছে, ২০২১ সালে বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ পিস। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত কিট বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৫০ পিস।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী অফিসার (সিইও) সেলিম রেজা বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের বছরব্যাপী অভিযান অব্যাহত আছে। এখন ডেঙ্গু সিজন, সেজন্য ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।”

নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ে অভিযান হয় না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাড়ির নিচে ও নির্মানাধীন বিল্ডিং-এ পানি জমে ডেঙ্গু সৃষ্টি হয়। আমরা নোটিশ করছি, অনেক সময় এসব বিল্ডিংয়ে যাওয়া যায় না।”

ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, অভিযানে অনেক বাড়ির মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযানের পাশাপাশি সকলকে আরও সচেতন হতে হবে। সচেতন থাকলে ডেঙ্গু মশার জন্ম হবে না।”

XS
SM
MD
LG