বিশ্বনেতা ও ফুটবল ভক্তদের উপস্থিতিতে কাতার রবিবার মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধন করে। আঞ্চলিক বয়কট ও আন্তর্জাতিক সমালোচনায় জর্জরিত হওয়ার পরও এই জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশটিতে ফুটবল ভক্তরা উপচে পড়েছেন।
আমেরিকান অভিনেতা মরগান ফ্রিম্যান এর সুমিষ্ট কন্ঠ ও উট-সজ্জিত এক আরব থিমের মধ্য দিয়ে ‘সবাইকে স্বাগত’জানানোর অঙ্গীকার করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
খেলার মাঠে কাতার বনাম ইকুয়েডর এর ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, কাতার ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও উদ্বোধনী ম্যাচে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
কয়েক বছরব্যাপী রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সৌদি আরব বিশ্বের সাথে কাতারকে সংযোগকারী একমাত্র স্থলসীমান্তটি বন্ধ করে দিয়েছিল। যুবরাজ বিন সালমানের উপস্থিতি এটিই প্রমাণ করে যে, এই দুই দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্য কতখানি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ঐ বিবাদের শুরুটা হয় যখন কাতার সেই সব ইসলামপন্থীদের পক্ষ নেয়, যারা ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর মিশরসহ অন্যান্য দেশে ক্ষমতায় আসে। কাতার তাদের ক্ষমতায় আসাকে, মধ্যপ্রাচ্যকে জর্জরিত করে রাখা প্রাচীন রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থবিরতায় এক ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখেছিল। আর, অন্য আরব দেশগুলো সেসময়ের বিক্ষোভগুলোকে তাদের স্বৈরশাসন ও পরিবারতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।
এছাড়া, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কাতারের অর্থায়ন করা গোষ্ঠীগুলো পরবর্তীতে চরমপন্থী হয়ে গেলে, দেশটি পশ্চিমাদের সমালোচনার মুখে পড়ে। অবশ্য ইসলামী চরমপন্থীদের অর্থায়নের বিষয়টি পরবর্তীতে কাতার অস্বীকার করে। তবু, হিলারি ক্লিনটন থেকে ডনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত, আমেরিকান রাজনৈতিক অঙ্গনের সকল ক্ষেত্র থেকেই কাতার সমালোচনার মুখে পড়ে।
রবিবারের উদ্বোধনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেবুনে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল, প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে।
কুয়েতের যুবরাজও উপস্থিত ছিলেন এই আয়োজনে। এছাড়াও ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এবং জিবুতির প্রেসিডেন্ট। জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
তবে কাতারের শাসক শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তার পিতা শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রশংসাধ্বনি ভেসে আসে। শেখ হামাদ বিন খলিফা ২০১০ সালে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ নিশ্চিত করেছিলেন।
এদিকে, ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে দেশটি তাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাঠায়। ইরান মাসখানেকের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে জর্জরিত হয়ে আছে। দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটকের পর ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর জের ধরে বিক্ষোভ শুরু হয়।