কাবুলের কাজ (Kaaj) শিক্ষাকেন্দ্রে বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি ১৭ বছর বয়সী ফাতিমা আমিরির পাতলা শরীরকে মাটি থেকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক মিটার দূরে ছুড়ে দেয়।
আমিরি কাবুলে তার বাড়ি থেকে ফোনে ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে কথা বলার সময় বলেন,"আমি অজ্ঞান হইনি।"
আমিরি বলেন, "আমি নিজে থেকে একটি নিকটবর্তী হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলাম।" ৩০ সেপ্টেম্বরের যে বিস্ফোরণের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, যে ঘটনায় ৫৪ জন নিহত এবং ১১৪ জন আহত হয়, যাদের বেশিরভাগই হাজারা জাতিগোষ্ঠীর ছাত্র এবং যারা আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ দ্বারা বারবার আক্রমণের শিকার হয়।
তিনি বলেন, "আমি আমার আহত কানে শুনতে পাই না, এবং আমি ঠিকমতো খেতে পারি না কারণ আমার চোয়াল প্রচন্ড ব্যথা করে।"
আফগানিস্তানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য একটি বার্ষিক পরীক্ষা, কাঙ্কর পরীক্ষা নামে পরিচিত, আমিরি গত মাসে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও, হাজার হাজার আবেদনকারীদের মধ্যে তিনি শীর্ষ ১০ এ অবস্থান করেছেন।
পরীক্ষায় আমিরির সাফল্য তার প্রিয় বিষয়, কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তি নিশ্চিত করেছে এবং আফগানিস্তানে তার একটি ভাল ভবিষ্যতের আশা দিয়েছে। যা কিনা এমন একটি দেশ যেখানে প্রায়শই নারীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ জায়গা হিসাবে জানানো হয়।
তহবিল সংগ্রহের অভিযান
চিকিত্সকরা আমিরিকে বলেছেন যে তিনি তার বাম কানে শ্রবণশক্তি ফিরে পাবেন যদি তিনি চিকিত্সার জন্য বিদেশে যেতে পারেন কারণ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নেই।
তার মুখ থেকে গুলির অংশ অপসারণ করতে, তার চোয়াল মেরামত করতে এবং তার কানের ভিতরে টিস্যু পুনরুদ্ধার করতে তার সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন।
বেশিরভাগ আফগানের মতো, আমিরির পরিবার দারিদ্রের মধ্যে বাস করে এবং তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর সামর্থ্য নেই।
সাহায্য সংস্থাগুলি বলছে যে তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ২০২১ সালে তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানে বিপর্যয়মূলক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে প্রায় সমস্ত আফগানকে গত এক বছরে দারিদ্রের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
৯ নভেম্বর, ভার্জিনিয়া-ভিত্তিক একজন আফগান দম্পতি আমিরির চিকিৎসা এবং সহায়তার জন্য একটি ত্রিশ হাজার ডলারের ক্রাউডফান্ডিং ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। সংগঠক ফরহাদ দারিয়ার মতে, ২২ নভেম্বর পর্যন্ত, প্রচারাভিযানটি সারা বিশ্ব থেকে শত শত অবদানকারীর কাছ থেকে ৩৩,০০০ ডলারেও বেশি পেয়েছে।
যদিও অভিযানকারীরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে, তবুও তারা তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
আফগানিস্তানের উপর আরোপিত আন্তর্জাতিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কাবুলে আমিরির পরিবারের কাছে তহবিল পাঠানো অত্যন্ত জটিল হবে।
আমিরির জন্য একটি পাসপোর্ট, ভিসা এবং ফ্লাইট টিকিটও নিশ্চিত ভাবে পেতে বাধা রয়েছে কারণ আফগানিস্তানে বেশিরভাগ দূতাবাস বন্ধ রয়েছে এবং তালিবান কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট প্রদান সীমিত করেছে।
ডরিয়া ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "আমরা তাকে ভারত বা তুরস্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, কিন্তু আফগানিস্তানের সাথে কোনো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং এটি সময়সাপেক্ষ এবং সহজ নয়।”