বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু লোক ব্যাংকে টাকা নেই বলে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সেই গুজবে কান দিয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে’।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়িতে রাখলে চোরেরা টাকা চুরি করতে উৎসাহিত হবে। এটা শুধু চোরদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করছে’।
‘ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে এমন গুজবের’ নিন্দা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) যশোর জেলা স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই, এটা একটা নির্জলা মিথ্যাচার’।
তিনি জানান, বুধবারও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কথা বলছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই’।
তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স আসছে, বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, রপ্তানি আয় বেড়েছে, কর আদায়ও বেড়েছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্য দেশগুলো যখন বৈশ্বিক মন্দার কারণে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, তখনো বাংলাদেশ শক্তিশালী হচ্ছে’।
তিনি জনগণকে কোনো গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, সব সময় গুজব ছড়ানো বিএনপির কাজ’।
বিএনপি কখনো দেশ ও জনগণের কল্যাণে কিছু করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যখন ক্ষমতায় ছিল সব সময় লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি ২০০১-০৬ মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ২৫০ কোটি ডলারে রেখেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫০০ কোটি ডলার। করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে কোনো রপ্তানি বা আমদানি হয়নি, তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে জমা হয়েছিল’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, সার, চাল ও গম কিনতে সরকার অর্থ ব্যয় করেছে। এগুলো (বৈদেশিক মুদ্রা) কোথাও যায়নি, এগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করেছি। যেমন- রপ্তানি করেছি, কৃষিতে প্রনোদনা দিয়েছি এবং ৮০০ কোটি ডলার ঘাটতির অর্থ দিয়েছি’।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, খুলনা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ হেলাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য ও জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যশোর জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। সমাবেশ পরিচালনা করেন যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী— শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে এ বাহিনী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও যুগোপযোগী।
তিনি বলেন, ‘আজকের বিমানবাহিনী অবকাঠামো, কৌশল ও প্রযুক্তির দিক থেকে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, আধুনিক ও কর্মতৎপর’।
বৃহস্পতিবার যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) একাডেমির রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২-এ ভাষণ দানকালে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ১০ জন ফ্লাইট ক্যাডেট পিটি-৬ এয়ারক্রাফটে প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ফ্লাইং ব্যাজ গ্রহণ করেন।
এ ছাড়াও, ৮১তম বাফা কোর্সের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য একজন ফ্লাইট ক্যাডেট সোর্ড অফ অনার অ্যান্ড কমান্ড্যান্টস ট্রফি এবং অন্য দুজন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি ও চিফ অব এয়ার স্টাফ ট্রফি পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার বিমান বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, সর্বশেষ এভিওনিক্সযুক্ত সি-১৩০জে পরিবহন বিমান, এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার এবং সামুদ্রিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার বিমানবাহিনীর বহরে অন্তর্ভুক্ত করা।
তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমাদের বিমানবাহিনী আজ একটি চৌকস ও দক্ষ বাহিনী’।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের প্রতি আপনাদের দায়িত্ববোধ থাকতে হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা দুর্ঘটনায় বিমানবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের সেবা করেছেন’।
তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের প্রতিটি দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হবে, প্রশিক্ষণ নিতে হবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪–এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে, যা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে এবং এয়ার ডিফেন্স নোটিফিকেশন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নিজস্ব জনবল ও অর্জিত প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ ও মনুষ্যবিহীন আকাশযান নির্মাণের একটি প্রকল্প চলছে। আমি মনে করি আমাদের জন্য একটি নতুন যুগ উন্মোচিত হবে (বিমান উৎপাদন শিল্পের ওপরে), যদি আমরা এটি করতে পারি (প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে পারি)’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার বিমানবাহিনীর সদস্যদের সামগ্রিক দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ সুবিধার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর সবসময় জোর দিয়েছে’।
তিনি জানান, উন্নত ও সময় উপযোগী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার ও ডিজিটাল ককপিটযুক্ত সর্বশেষ ইয়াক-১৩০ যুদ্ধ প্রশিক্ষক, কে-৮ডব্লিউ জেট প্রশিক্ষক, এল-৪১০ পরিবহন প্রশিক্ষক, এডব্লিউ১১৯কেএক্স হেলিকপ্টার প্রশিক্ষক এবং বিভিন্ন সিমুলেটর বিমানবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংযোজন ছিল গ্রোব প্রশিক্ষণ বিমান। এই অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান দিয়ে প্রাথমিক ফ্লাইট প্রশিক্ষণ শুরু হবে। রাতে বিমানবাহিনীর পাইলটদের ফ্লাইং ট্রেনিংয়ের সুবিধার্থে নাইট ভিশন প্রশিক্ষকও যুক্ত করা হয়েছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং এয়ারম্যান ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক কাঠামো ও সম্প্রতি এয়ার কমান্ড অপারেশন সেন্টারের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন করেছে। ফলে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিখুঁত হয়ে উঠেছে এবং দেশের আকাশসীমায় বিমানের বিস্তৃত ক্রিয়াকলাপ নিরীক্ষণ করা সহজ হয়েছে। শুধু অপারেশন ও প্রশিক্ষণ নয়, আমরা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সকল কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বহুমুখী কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছি’।
উত্তীর্ণ ক্যাডেটদের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাদারিত্ব অর্জনের জন্য সচেষ্ট হতে বলেন।
এর আগে শেখ হাসিনা বিএএফ একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণের পাশাপাশি ফ্লাই-পাস্ট ও অ্যারোবেটিক প্রদর্শন উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।