আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এই সমাবেশে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা আরও জানান যে রাজধানীতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ, বিএনপির অন্য ৯টি বিভাগীয় কর্মসূচির মতো। যেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন এবং দলের পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন। তবে, বিএনপি নেতারা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চান। বিএনপির নেতারা আরও বলেন, তারা বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চান। কারণ তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার এবং ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচির পর সরকারের পদত্যাগের দাবি আদায়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “ঢাকার সমাবেশ নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো। আমি জানি না কেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এবং কিছু মিডিয়া আমাদের চেয়ারপারসনের সমাবেশে অংশ গ্রহণের কথা বলছে। আমাদের স্থায়ী কমিটি কখনই এই বিষয়ে আলোচনা করেনি এবং আমাদের এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না।”
তিনি জানান যে তারা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করে তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ তারা দেবেন না। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দেব না, কোনো বিবেকহীন পদক্ষেপ নেব না।”
গত ৮ অক্টোবর ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেছিলেন যে ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ চলবে। তার এই বক্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়তে শুরু করে। এর দুই দিন পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছিলেন, খালেদা জিয়া ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দেবেন এবং পরে দলের আরও কিছু মধ্যম সারির নেতা আমান ও ফারুকের বক্তব্যকে সমর্থন করে কথা বলেন।
এমন পরিস্থিতিতে, বুধবার (৩০ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, “শর্তসাপেক্ষে সাময়িক ভাবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়া, ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দিলে আদালত ব্যবস্থা নেবে।”
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে মুক্ত করা হয়েছে। কারণ তার পরিবার একটি আবেদন জমা দিয়েছে যে তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন বলে তিনি চলাচল করতে পারছেন না। খালেদা জিয়া এখন যদি ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে যোগ দেন, তাহলে প্রমাণ হবে যে তার পরিবারের আবেদনে যা লেখা ছিল তা মিথ্যা ছিল।”
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদাকে ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
দুর্নীতির দুই মামলায় তিনি দণ্ডিত। কারাগার থেকে তার শর্তসাপেক্ষে মুক্তির মেয়াদ কয়েকবার বাড়িয়েছে সরকার। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপার্সন।
সমাবেশ করার জন্য বিএনপি রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চাইলে, ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সরকার। সমাবেশে খালেদা জিয়ার যোগদানের বিষয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, “জনসভায় খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ গণমাধ্যম ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি।” তিনি বলেন, “আমাদের কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সব ধরনের চক্রান্ত ও উসকানি সম্পর্কে সতর্ক থাকব আমরা।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে জনসভায় খালেদা জিয়া যোগ দেবেন বলে মন্তব্য করছেন। তিনি বলেন, “ম্যাডাম (খালেদা) গৃহবন্দি এবং তিনি খুব অসুস্থ। আমরা কখনই বলিনি যে তিনি আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নেবেন। সরকার এই ইস্যুতে খারাপ খেলা খেলছে। আমরাও রাজধানীতে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করব এবং তারপর বাড়ি ফিরব। আমাদের অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।”