জাতিসংঘ ও সহযোগীরা বৃহস্পতিবার, ২০২৩ সালের জন্য ৫,১৫০ কোটি ডলারের রেকর্ড পরিমাণ সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কোটি কোটি অতিরিক্ত মানুষের সহায়তার প্রয়োজন হবে, যা কিনা মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাটিকে “শেষ প্রান্তে ” ঠেলে দিবে।
এই আবেদন ২০২২ সালের তুলনায় ২৫% বেশি এবং এক দশক আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি।
দ্য ইউএন গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান ওভারভিউ এর প্রাক্কলন অনুযায়ী আগামী বছর অতিরিক্ত ৬ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের সহায়তার প্রয়োজন হবে। এর ফলে ৬৮টি দেশে সহায়তার প্রয়োজনে থাকা মোট মানুষের সংখ্যা হবে ৩৩ কোটি ৯০ লক্ষ।
এটি বিশ্বের জনসংখ্যার ৪% এরও বেশি, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আফ্রিকার শৃঙ্গ এলাকায় খরার কথা উল্লেখ করে, জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক, মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, “মানবিক সহায়তার চাহিদা বিস্ময়কর রকমের বেশি, কারণ এই বছরের চরম ঘটনাগুলো ২০২৩ সাল অব্দি গড়াচ্ছে।”
সংঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্থানচ্যুত মানুষের সংকটটি ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নয়মাসের যুদ্ধের ফলে খাদ্য রফতানি ব্যাহত হয়েছে এবং ৩৭টি দেশে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ বর্তমানে অনাহারের সম্মুখীন বলে, প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার গ্রিফিথস বলেন যে, কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং এর ফলে চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে কলেরার মত অন্যান্য অসুখের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
এই প্রথমবারের মত ১০টি দেশ প্রত্যেকে পৃথকভাবে ১০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার আবেদন করেছে।দেশগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন এবং ইয়েমেন।
তবে অপরদিকে, একাধিক সংকটের ফলে দাতা তহবিলে ইতোমধ্যেই টান পড়েছে। যার ফলে সহায়তা কর্মীদের অগ্রাধিকার নির্ধারণের মত কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
জাতিসংঘ তাদের সর্বকালের সর্বোচ্চ তহবিল ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। মধ্য-নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে দেখা যায় যে, ২০২২ সালে তাদের প্রয়োজনীয় তহবিলের ৫৩% অপূর্ণ থেকে গিয়েছে।
জাতিসংঘের অন্যান্য অংশে দেশগুলোর ফি তাদের দেশের অর্থনীতির আকারের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। তবে মানবিক সহায়তার তহবিলটি স্বেচ্ছায় দেওয়া অর্থের উপরই নির্ভর করে এবং এর বেশিরভাগই পূরণ হয় পশ্চিমা দেশগুলোর দান করা অর্থ থেকে।
এসব দাতাদেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দাতা। দেশটি এই বছর এ পর্যন্ত ১,৪০০ কোটি ডলারের বেশি দান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর রয়েছে জার্মানী ও ইউরোপীয় কমিশন। অপরদিকে চীন ও ভারতের মত অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতির দেশ প্রত্যেকে ১ কোটি ডলারেরও কম দান করেছে।