অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মিলনমেলা হয়নি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সীমান্তে, দেখা না করেই ফিরে গেলেন স্বজনরা


মিলনমেলা হয়নি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সীমান্তে
মিলনমেলা হয়নি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সীমান্তে

বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার মাকড়হাট ক্যাম্পের ৩৪৬ পিলার সংলগ্ন টেংরিয়া গোবিন্দপুর গ্রামের কুলিক নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী পাথর কালী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বহু বছর ধরে এই মেলা উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই বাংলার হাজারো মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কুশল বিনিময় করেন। এবার মিলনমেলা হয়নি। ভারতে নির্বাচন আছে, তাই এবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দুই দেশের মানুষকে আলাদা করে রেখেছে। তবে আলাদা করতে পারেনি স্বজনের প্রতি ভলোবাসা। মমতার টানে মানুষ ছুটে যায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে, সুযোগ পেলেই দেখা মেলে বহুকাল ধরে অদেখা স্বজনের। এখানে কয়েক যুগ ধরেই পাথর কালী মেলার আয়োজন করছে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। কালী পূজার পর বসে পাথর কালী মেলা। মেলাকে ঘিরে একদিনের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দুই বাংলার মানুষ আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনেন ।

জানা যায়, হরিপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। দেশ ভাগের কারণে আত্মীয়স্বজনরা দুই দেশে ভাগ হয়ে পড়ে। সারা বছর তারা দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারেন না। তাই অপেক্ষায় থাকেন কালী পূজার পরের শুক্রবার পাথর কালী মেলার এই দিনের জন্য।

শুক্রবার মোবাইলফোনে চলছিল আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ । এ মিলনমেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়াও, দুই বাংলার শত শত মুসলমান আত্মীয়স্বজন একে অপরকে একনজর দেখার জন্য কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে এবারও ভিড় জমান। সকালে হাসিমুখে দেখা করতে এসে, বিকালে দেখা না হওয়ার বেদনা নিয়ে কাঁদতে হয়েছে, ফিরে যেতে হয়েছে এই সব মানুষের।

শুক্রবার (০২ডিসেম্বর) সকালেই জমুরকালী (পাথর কালী) জিউ পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এবারও পূজার আয়োজন করেছিল পূজা উদযাপন কমিটি। পূজা উপলক্ষে দুই বাংলার সীমান্তে লাখো মানুষের সমাগম হয়, মেলা জমে, কেবল স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয়নি এবার। এবার সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে কোন মানুষজনকে ভিড় জমাতে দেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। হরিপুর উপজেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, এবারও মিলনমেলা'র আয়োজন করা হয়। ভারতীয় প্রশাসনিক জটিলতার কারণে দেখা সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি।

দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলা থেকে আসা নাজমা বেগম বলেন, “ভারতে ভাই-ভাবী বসবাস করেন। তাই তাদের সঙ্গে দেখা করতে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছি।” দেখা হয়নি। করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর দেখা হয়নি তাদের।” নীলফামারীর জলঢাকা থেকে ভারতে বসবাস করা ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন বৃদ্ধা মধুবালা। তিনি জানান, “টাকার অভাবে ভারতে যেতে পারি না, তাই খবর পেয়ে এলাম ছেলেকে দেখতে; না দেখেই ফিরে যাচ্ছি।”

লালমনিরহাট থেকে আসা সুদর্শন বলেন, “ভারতে আমার ভাগ্নি থাকেন। তাদের সঙ্গে দুই বছর পর দেখা করতে এসেছি। ভারতে নির্বাচনের অজুহাতে এবার দেখা করতে দেওয়া হয়নি। প্রতি বছর যেন দেখা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।” রংপরের পীরগঞ্জ থেকে আসা বাকলী রাণী (৫৭), চন্দ চাঁদ রায় (৬০) আমল (৪৭) সহ অনেকে জানান, সকাল থেকে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা; দেখা হয়নি স্বজনের মুখ। তারা জানান, আত্মীয়রা ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে কাঁটাতারের কাছে আসতে পারছে না।

পূজা কমিটির সভাপতি মধুবাবু বলেন, “দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে মিলনমেলা করা সম্ভব হয়নি। শুধু পূ্জা পালন করা হয়েছে। এবার মিলনমেলার আয়োজন করা হলেও স্বজনদের দেখা সাক্ষাত করা সম্ভব হয়নি।”

এবিষয়ে ভাতুঁড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকার বলেন, “করোনার কারণে দুই বছর মিলনমেলা হয়নি। দুই বাংলার এই সম্পর্ক যেন যুগ যুগ অটুট থাকে। সেজন্য প্রতিবছর এইদিনে এই স্বজন সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়।”

হরিপুরের গোবিন্দপুর ও চাপাসার ক্যাম্পে কর্মরত বিজিবি সদস্যরা জানান, এবার মিলনমেলায় কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে দেখা করে কথা বলার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কাঁটাতারের কাছে কোন বাংলাদেশী যেন না যায়, সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ করেছেন তারা।”

XS
SM
MD
LG