বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন যে আগামী দুই বছরের মধ্যে, তরল জ্বালানি ভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে, এনার্জি ট্রানজিশন: গ্লোবাল কনটেক্সট শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি আগামী দুই বছরের মধ্যে তরল জ্বালানি চালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।”
এমন সময় প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেছেন, যখন বিদ্যুত ও জ্বালানি সংকট এবং প্রাথমিক জ্বালানির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স-বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম ও ডা. বদরুল ইমাম, জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন, বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)-এর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান এবং পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে এক বছরের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। এগুলো হলো প্রযুক্তিগত উন্নতি, সাশ্রয়ী মূল্যে এবং দ্রুততম সময়ে জ্বালানি সরবরাহ করা।”
নসরুল হামিদ উল্লেখ করেন, “সরকার জ্বালানি ব্যবসায় বেসরকারি খাতের আরও সম্পৃক্ততা চায়। এ কারণে সব ধরনের জ্বালানি পণ্য আমদানি এখন বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি খাত এলপিজির পাশাপাশি সব ধরনের তরল জ্বালানি এবং এলএনজি আমদানি করতে পারে। তারা তাদের নিজস্ব স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে এবং পেট্রোল পাম্পে বিক্রির জন্য ডিলারদের সরবরাহ করতে পারে।”ss
বিদ্যমান ডিজেল চালিত বাস এবং অন্যান্য পরিবহনের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) ব্যবহার করার ওপর জোর দেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, “সরকারি খাতের বাস এবং ট্রেনগুলোকে ইভি ব্যবহারে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এর জ্বালানি সক্ষমতা ৮০ শতাংশ এবং ডিজেল চালিত যানবাহনের সক্ষমতা মাত্র ২০ শতাংশ।”
ড. তামিম বলেন, “বর্তমান সংকটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশের তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। ৫ থেকে ১০ বছর সময়ের ফ্রেমে সেক্টরভিত্তিক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ-এর ভিত্তিতে চাহিদার পূর্বাভাস নেওয়া উচিত।” ভবিষ্যতের জ্বালানি ক্রয় চুক্তি এবং ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখতে, বিশ্বমানের জ্বালানি ব্যবসায়ীদেরকে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, “একটি বিস্তৃত বিশ্ব সম্পদ প্রবাহ এবং বহিঃপ্রবাহ বিশ্লেষণ করা উচিত।”
আইআরইএনএ -এর সুপারিশের কথা উল্লেখ করে ড. তামিম বলেন, “সিও২ নির্গমন কমাতে বাংলাদেশের সর্বোত্তম পথ হলো দক্ষতার উন্নতি, কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (বিইসিসিএস) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সঙ্গে জৈব শক্তির ওপর জোর দেওয়া।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও দক্ষতার উন্নতির প্রতিটি দিক জোরদারভাবে উৎসাহিত করা, অর্থায়ন করা এবং নীতিগতভাবে সমর্থিত করা উচিত। আর, জ্বালানি ও দক্ষতা প্রযুক্তি অভিযোজনের ওপর একটি পৃথক গবেষণা করা উচিত এবং গ্রিড আপগ্রেডেশন ও উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাধীন সিস্টেম অপারেটর তৈরিতে অবিলম্বে বিনিয়োগ প্রয়োজন।”
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় এখনও স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানের বিশাল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সরকারের উচিত জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠতে এই ধরনের সম্ভাব্য সুযোগ গুলো ব্যবহার করা।”