দুই বছরেরও বেশি সময় বিলম্বের পর অবশেষে পদ্মা নদী পার হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা থেকে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালু হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, ‘লাইনটি ১৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জ গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ৪০০ কেভি ভোল্টেজসহ সফলভাবে চালু করা হয়’।
তবে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া ইউএনবিকে জানান, লাইনটি চালু হলেও এ লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে আগামী শনিবার থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিকল্পনা করেছি এবং তারপর ধাপে ধাপে এটি ধীরে ধীরে সমস্ত সিস্টেমের সঙ্গে সিঙ্ক্রোনাইজ করে সম্পূর্ণরূপে চালু করা হবে’।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, নবনির্মিত লাইনটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র—১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা এবং ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সুবিধা হবে।
এর মধ্যে চীনের কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টের ৬২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে। এছাড়াও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (৬২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা) একটি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে এবং এটি আগামী বছরের মার্চ মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই দুটি প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ রাজধানীতে আনতে পারলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ সঞ্চালন লাইন বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়।
কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পদ্মা নদীতে টাওয়ার স্থাপনের কাজ স্থগিত ছিল। ফলে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে এক বিলম্বের সম্মুখীন হয়।
পিজিসিবি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছে যে, নবনির্মিত আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সফলভাবে চার্জিং পাওয়ার সঙ্গে চালু করেছে পিজিসিবি।
গোপালগঞ্জ থেকে আমিনবাজার গ্রিড সাবস্টেশন পর্যন্ত লাইনের দৈর্ঘ্য ৮২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পদ্মা নদীতে রয়েছে ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার।
গোপালগঞ্জ থেকে আমিনবাজার লাইনে মোট ২২৬টি টাওয়ার রয়েছে। নদী পারাপারের সুবিধার্থে পদ্মা নদীতে এবং উভয় পাশে মোট ১১টি উঁচু টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
যেহেতু লাইনটি ৪০০ কেভি ভোল্টেজে সফলভাবে চার্জ করা হয়েছে, শিগগিরই সমস্ত প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি এবং মূল্যায়নের পরে এই লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন (লোড প্রবাহ) শুরু হবে।
নবনির্মিত লাইন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতিপূর্বে নির্মিত পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি লাইন এবং গোপালগঞ্জ-মোংলা ৪০০ কেভি লাইন ঢাকার উপকণ্ঠে আমিনবাজার গ্রিড সাবস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
পিজিসিবি উল্লেখ করেছে, এটি বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের সংযোগকে আরও শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।