অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু, প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশবাদীরা


রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে উৎপাদিত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইতোমধ্যেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে শুরু করেছে। পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে বহুল আলোচিত-সমালোচিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরিবেশ-প্রতিবেশে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা অনুভব করছেন পরিবেশবাদীরা।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত থেকে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই দেশের মধ্যে নির্মাণ চুক্তির এক যুগ পর, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত হলো এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশবাদী সক্রীয় কর্মীরা।
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ বলেন, “আমরা বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছি। পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে, সব ধরনের কারিগরি কাজ করা হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”

২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়।

এই কোম্পানির অধীন, ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে, ১৬ হাজার কোটি টাকার রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।

এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা কয়লা পরিবহন করা হবে সুন্দরবনের পশুর নদ দিয়ে। এই পরিবহন, পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও শঙ্কিত পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য এমএ সবুর রানা বলেন, “পরিবেশ দূষণ ও সুন্দরবন ধ্বংস করে আমরা বিদ্যুৎ চাই না। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প রয়েছে। সুন্দরবনের বিকল্প নেই।” বিষয়টি সবাইকে বিবেচনা করার দাবি জানান এই পরিবেশকর্মী।

রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সুফল রামপাল ও বাগেরহাটবাসী পেতে শুরু করেছে। এই কেন্দ্রের ফলে এলাকার মানুষ নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ পাবে।” এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হচ্ছে এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি করেন তিনি।

রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, “প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৪০০ মেগাওয়াট গোপালগঞ্জের আমিন বাজার হয়ে ঢাকার জাতীয় গ্রীডে এবং ২৬০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া, দ্বিতীয় ইউনিটের ৭৯ দশমিক ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।”

রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা রবীন্দ্র কুমার বলেন, “ধীরে ধীরে মেশিনের কার্যক্ষমতা বাড়াচ্ছি, আমাদের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে,স্থানীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জাতীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে এই কেন্দ্র।”

XS
SM
MD
LG