অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গ্রীষ্মের সম্ভাব্য জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়


বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম-এর দাম সংশ্লিষ্ট কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুটি বিভাগ এবং তাদের।সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন গ্রীষ্মে একটি সম্ভাব্য কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে; যে বিষয়গুলো আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকতে পারে, এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শিগগিরই উদ্যোগ নেবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠক ডেকেছিল। বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “শেষ মুহূর্তে এই বৈঠক স্থগিত করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “যেদিন সভা স্থগিত করা হয়েছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রীর একজন নতুন মুখ্য সচিব ও একজন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আমরা আশা করি শিগগিরই স্থগিত সভা ডাকা হবে, যেখানে দুই শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকতে পারেন।” ঐ কর্মকর্তা আরও জানান, খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়টি প্রস্তাবিত বৈঠকে বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে। বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

এদিকে, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন যে তার প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে। সূত্র বলছে, পাওয়ার সেক্টরের রাজস্ব সংগ্রহের বিশাল ত্রুটি ঢাকতে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর সরকারের পরিকল্পনার পটভূমিতে প্রধনিমন্ত্রীর দপ্তর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রির কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর পাইকারি বাজারে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।এর ফলে লোকসান মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।

অবশিষ্ট ক্ষতি পূরণের জন্য, ছয় বিতরণ কোম্পানি-কে তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবনা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দিতে বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ । তারা ইতোমধ্যেই বিইআরসিতে খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সরকারের খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে, বিইআরসিকে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি গণশুনানি অনুসরণ করতে হবে। আর, পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় ৯০ দিন সময় লাগবে।

এ অবস্থায়, কমিশনের গণশুনানি ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে সরকারকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্বভাবে জ্বালানি দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য, ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০২২ এর একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে।খুচরা বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের জন্য গণশুনানির আয়োজন করবে না-কি সরকার নিজেই খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে বিইআরসি এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়। যাতে এটি ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে একটি নির্দেশ দিতে পারে। কর্মকর্তারা আরও বলেছেন যে পরবর্তী গ্রীষ্মে পরিস্থিতি মোকাবেলায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভা থেকে একটি নির্দেশনাও আশা করা হচ্ছে।

সাধারণত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়তে শুরু করে। সাধারণত, প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের অতিরিক্ত চাহিদা থাকতে পারে আগামী গ্রীষ্মে। যা আসবে প্রধানত কৃষি সেচ খাত থেকে। এই চাহিদা আগামী বছরের মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া রোজার মাসেও বাড়তি তিন হাজার মেগাওয়াট চাহিদা বাড়তে পারে।

প্রাথমিক জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চাপে রয়েছে। আগামী বছরে একটি বড় ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও, সরকার ভর্তুকি মূল্যে সবাইকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বৈশ্বিক মন্দা বিবেচনায় কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না। সকলকে প্রকৃত মূল্য দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। প্রাথমিক জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

XS
SM
MD
LG