অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঘন কুয়াশা: বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত


বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া নৌপথে, ঘন কুয়াশার কারণে অষ্টম দিনের মতো বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে পাঁচটার থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। একই কারণে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনা জেলার কাজিরহাট নৌপথেও ভোর সাড়ে চারটার পর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ এই দুই রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ রাখছে। এই নৌ-রুটগুলো রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ফেরি বন্ধ থাকায়, দৌলতদিয়ায় চারটি, পাটুরিয়ায় ছয়টি ও মাঝ নদীতে একটি ফেরি আটকা পড়ে। আরিচা ও কাজিরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া দুটি ফেরি মাঝ নদীতে আটকা পড়ে। বেলা পৌনে ১১টার পর থেকে কুয়াশা কিছুটা হালকা হলে, ফেরিগুলো নির্দিষ্ট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায়, উভয় ঘাটে বিভিন্ন যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে। এরমধ্যে বেশিরভাগ ছিল পণ্যবাহী গাড়ি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ভারী কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত শেষে বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে দৃষ্টি-মান কয়েক গজের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসময় দৌলতদিয়ায় রো রো (বড়) ফেরি ভাষা শহীদ বরকত, শাহ জালাল, এনায়েতপুরী ও ইউটিলিটি (ছোট) হাসনা হেনা এবং পাটুরিয়ায় রো রো ফেরি কেরামত আলী, শাহ মখদুম, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, খানজাহান আলী, ইউটিলিটি চন্দ্র মল্লিকা ও কেটাইপ ফেরি কুমিল্লা যানবাহন বোঝাই করে নোঙর করে থাকে।

পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধ্যা মাঝ নদীতে কুয়াশার কবলে পড়লে, নোঙর করতে বাধ্য হয়। দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো ফেরি শাহ জালাল মাঝ নদীতে দীর্ঘক্ষণ আটকা থাকে। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার পর কুয়াশা কমতে থাকলে নোঙর করে থাকা ফেরিগুলো ছাড়তে থাকে।

বিআইডব্লিউটিসির অধীন আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ভোর সাড়ে চারটার পর থেকে বেলা পৌনে ১১টার পর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা ফেরি বন্ধ থাকে। এসময় উভয় ঘাটে বেশকিছু গাড়ি আটকা পড়ে। বেলা সাড়ে ১১টার পর মাঝ নদীতে নোঙর করে থাকা কেটাইপ (মাঝারি) ফেরি ক্যামেলিয়া ও কুঞ্জলতা নির্দিষ্ট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভারী কুয়াশা আর তীব্র শীতে মাঝ নদীতে থাকা ফেরিগুলোর যাত্রী ও গাড়ি চালকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সকাল ১০টার দিকে দৌলতদিয়ায় দেখা যায়, সাত নম্বর ঘাটে দুটি, তিন ও চার নম্বর ঘাটে একটি করে ফেরি যানবাহন বোঝাই করে কুয়াশা কমার অপেক্ষায় রয়েছে। নদী পাড়ি দিতে না পাড়ায় ফেরি ঘাট সড়কে শতাধিক যাত্রীবাহি গাড়িসহ পণ্যবাহী গাড়িকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

পাটুরিয়ায় দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা পিরোজপুরগামী বাসযাত্রী জিহাদ হাসান সজল বলেন, “মঙ্গলবার গভীররাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার এক ভাগ্নে মারা যান। খবর পেয়ে রাতে রওয়ানা দিতে পারিনি বলে ভোরে রওনা দেই। সকালে পাটুরিয়া ঘাটে এসে প্রায় পাঁচ ঘন্টার মতো আটকে ছিলাম।”

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, “অষ্টম দিনের মতো মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নদী অববাহিকায় কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে কুয়াশা ঘন হতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং এর এক ঘন্টা আগে সাড়ে চারটা থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুয়াশা কেটে গেলে বেলা পৌনে ১১টার পর থেকে দুই নৌপথে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়।”

কুড়িগ্রামে বিপর্যস্ত জনজীবন

ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের জন-জীবন। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা সেই, সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়া, দু’য়ে মিলে বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। পথ-ঘাট কুয়াশায় ঢেকে থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষজন।

শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায়, সময়মতো কাজে যেতে পাড়ছেন না শ্রমজীবীরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিরাবনের চেষ্টা করছেন অনেকে। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

কুড়িগ্রাম দূর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, “কুড়িগ্রাম জেলায় গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৩৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব কম্বল ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।” এছাড়াও বেসরকারি ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন মিয়া জানান, “বুধবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলেও জানান তিনি।

XS
SM
MD
LG