বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁর দল ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখবে এবং জনগণের সেবা করবে।
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার (১১ জানুয়ারি) চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের উপ-প্রধানমন্ত্রী চেন ঝোর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী নির্বাচনে আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে আমরা দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব এবং জনগণের সেবা করব’।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে এবং মানুষ এর সুফল ভোগ করছে’।
এ ছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ‘বাংলাদেশ সংঘাত চায় না এবং এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে’।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য ব্রিফ করেন।
আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা হরে—শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল যদি আবার সরকার গঠন করতে পারে তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামকে একটি জনপদ এবং দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজীর (পিরোজপুর-৩) প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সোসাইটির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮: সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ এবং নিরাপদ বদ্বীপ' গড়ে তোলার পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত বাংলাদেশের যাত্রার প্রথম ধাপ হিসেবে দেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে যেখানে মাথাপিছু গড় আয় ৫ হাজার ৯০৬ ডলারের (ইউএস) বেশি হবে এবং বাংলাদেশ ২০৪১ সালে মাথাপিছু ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি আয়সহ একটি উন্নত দেশ হবে’।
বাংলাদেশে বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২৫ সালে এই হার ৮ দশমিক ৫১, ২০৩১ সালে ৯ এবং ২০৪১ সালে ৯ দশমিক ৯-এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে’।
এ ছাড়া রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘যে পরিকল্পনাগুলো এখন বিবেচনাধীন রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিশন ২০৪১-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, স্মার্ট ডেলটা তৈরির জন্য বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান-২১০০, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২৬-২০৩০), দশম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০৩১-২০৩৫) এবং ১১তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০৩৬-২০৪০)’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রচারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হবে। ক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলা হবে। সড়ক, সমুদ্র, রেল ও বিমান যোগাযোগের জন্য গৃহীত সকল প্রকল্প সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ওপর জোর দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যের জন্য নতুন বিদেশি বাজার খোঁজার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসের উৎপাদন এবং ডিভাইসের নিজস্ব বাজার সম্প্রসারণ করা হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের মৌলিক চাহিদা-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হবে’।
এ ছাড়া প্রতিটি গ্রামকে জনপদে রূপান্তর করে একটি উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে এ ব্যাপারে যথাসময়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে’।