যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট ডোনাল্ড লু বলেছেন যে দায়িত্ব পালনের সময় ‘মানবাধিকারকে সম্মান করার’ ক্ষেত্রে র্যাবের ‘অভূতপূর্ব অগ্রগতি’ হয়েছে। রবিবার বিকালে, বাংলাদেশর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ডোনাল্ড লু এ মন্তব্য করেন।
ডোনাল্ড লু জানান যে র্যাবের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক বিবৃতি উল্লেখ করেছেন। যাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমার ক্ষেত্রে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা এটি স্বীকার করি। এটি একটি অভূতপূর্ব কাজ। এতে দেখা যায় যে র্যাব মানবাধিকারকে সম্মান করার মধ্য দিয়েও তার সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে।”
সংবাদ ব্রিফিং-এ আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট বলেন, “আমাদের খুব সৎ ও মুক্ত আলোচনা হয়েছে।” শ্রম অধিকার ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি বাংলাদেশের জন্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
ডোনাল্ড লু বলেন, “আজ (১৫ জানুয়ারি) সকালে আমার সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। যাতে আমরা এই দেশে শ্রম অধিকারের উন্নতিতে সহযোগিতা করতে পারি। আমি খুব আত্মবিশ্বাসী যে আমরা এই বছর অগ্রগতি করতে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যোগদান করুক, sযুক্তরাষ্ট্র তা চায় কি-না; জানতে চাইলে অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট বলেন যে তারা এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশের জন্য জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) সুবিধা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান, তারা এ বিষয়ে কংগ্রেসের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ডোনাল্ড লু বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।কংগ্রেস অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ তালিকায় (জিএসপি সুবিধা পাওয়া) প্রথম দেশ হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।