অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি—আইনমন্ত্রী আনিসুল হক


আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

বাংলাদেশ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।

তিনি বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কারও সম্পর্কে ভালো কিছু লেখে না। তবে তারা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ডোনাল্ড লু বলেছেন, তারা র‌্যাবের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন, কিন্তু বাংলাদেশের হিসেবে তা করেননি। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে’।

আনিসুল হক বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিমের সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে উদ্ধৃত করে আনিসুল হক বলেন, ‘ডোনাল্ড লু বলেছেন, “আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) দেখেছি র‌্যাব অনেক ভালো করেছে। আমরাও র‌্যাবের প্রয়োজনীয়তা বুঝি। যেহেতু মানবাধিকার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, তাই আমরা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিনি”। তিনি (লু) আমাকে খুব স্পষ্টভাবে এ কথা বলেছেন’।

এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আমি ডোনাল্ড লুকে বলিনি, কারণ এটি আইনি প্রক্রিয়া মেনেই করতে হবে। আমরা সেই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করছি’।

র‍্যাবের সংস্কার সম্পর্কে আনিসুল হক বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যরা অপরাধ করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান; এর জন্য সময় লাগে’।

লুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর পলাতক দণ্ডিত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি (লু) আমাকে তাদের বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

আনিসুল হক আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে (লু) বলেছি তাঁকে (রাশেদ চৌধুরী) ফিরিয়ে আনতে দরজায় কড়া নাড়ব’।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার উপায়, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে কথা শুনতে গত শনিবার সন্ধ্যায় লু ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তাঁর সংক্ষিপ্ত অবস্থানের সময়, লু পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনা করতে আইনমন্ত্রী এবং সুশীল সমাজের নেতারাসহ বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG