বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত দেশগুলোকে দায়িত্বশীল এবং আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। শনিবার (২১ জানুয়ারি) জার্মানির বার্লিনে ‘১৫তম বার্লিন কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে’- আব্দুর রাজ্জাক এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “খাদ্য ও কৃষি উপকরণকে যুদ্ধ ও অবরোধের বাইরে রাখতে হবে।”
জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অফ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (বিএমইএল) -এর আয়োজনে, ১৮ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ১৫তম গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারে (জিএফএফএ)। এ সম্মেলনে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশের কৃষিমন্ত্রী ও ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বলেন, “চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নির্দোষ ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। এ যুদ্ধের ফলে সারের দাম চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, খাদ্যশস্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এই যুদ্ধ প্রভাব ফেলেছে। এ নেতিবাচক প্রভাব নিরসনের জন্য আমি উন্নত বিশ্বকে নমনীয়, সহজ ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরেন ড. রাজ্জাক। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার একটি উন্নত, টেকসই ও জলবায়ুসহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে। যার মাধ্যমে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই হবে, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত হবে এবং কৃষকরা উন্নত জীবন পাবেন।”
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, “জমি হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কপ-২৬, কপ-২৭ ও অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য উন্নত দেশগুলোকে আমি অনুরোধ করছি।”
১৫তম গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার ও কৃষি মন্ত্রীদের সম্মেলনে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুযায়ী বৈশ্বিক ক্ষুধা নিরসন (জিরো হাঙ্গার) করার কথা রয়েছে। বাস্তবতা হলো, ক্ষুধায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে ৭০ কোটি ২০ লাখ থেকে ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়েছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় চার কোটি ৬০ লাখ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ কোটি বেশি। বর্তমানে বিশ্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ খাদ্য সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। প্রজাতি বিলুপ্তি, কোভিড ১৯, আর যুদ্ধ; খাদ্যসংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই পরিস্থিতি সামনে রেখে, কীভাবে ক্রাইসিস-প্রুফ খাদ্য ব্যবস্থা, জলবায়ু সহনশীল খাদ্য ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং টেকসই বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহযোগিতা বাড়ানো যায়; এই চারটি বিষয়কে সম্মেলনে গুরুত্ব প্রদান করা হয়।