আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অপেশাদারি আচরণ ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে এবার নীলফামারী জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ ৩ জনকে তলব করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।
নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১–এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। আইনজীবীরা হলেন- মো. মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম ও আইনজীবী ফেরদৌস আলম।
বিচারকদের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সদস্যদের বিশৃঙ্খলা ঘটনা শেষ হওয়ার আগেই নতুন এই ঘটনা সামনে এল।
জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১–এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ার একটি পত্র পাঠান। সেই পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “২৮ নভেম্বর তারিখে আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির জন্য ছিল। পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভুক্তভোগীকে পরীক্ষার পর আসামির জামিন নামঞ্জুর করি এবং অপরাপর আসামিদের জামিন আবেদন এবং মেয়াদ বর্ধিতকরণ আবেদন না-মঞ্জুর পূর্বক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করি। এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ওই মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীরা অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণপূর্বক হামলা করার প্রয়াস চালায়। তারা হুমকি দিয়ে বলে, 'জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নাই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছ, আইন-কানুন জানো না, নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর, এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছ, এসেই উল্টাপাল্টা আদেশ দাও। এই পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করাকালীন সময়েও বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহসভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। উক্ত সময়ে উপস্থিত অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে তারা যে আচরণ করেছেন তাতে আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসাবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি এবং উক্ত ঘটনার কারণে আমিসহ এই জেলার অপরাপর বিজ্ঞ বিচারকগণ নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এমতবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের সদয় মর্জি হয়”।
এরপর গত ২৯ ডিসেম্বর অভিযোগপত্রটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন। গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদেশের জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে।