মানব পাচার সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিবেদন-২০২২ এ বলা হয়েছে যে করোনা মহামারীর কারণে মানব পাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন (বিডিইউএনএনএম)-এর সমন্বয়ক আবদুসসাত্তার এসোয়েভ বলেছেন, “বাংলাদেশের জন্য মানব পাচার একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়।”
দ্যা গ্লোবাল এ্যাকশন এ্যাগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সন এ্যান্ড দ্যা স্মাগ্লিং মাইগ্রান্টস-বাংলাদেশ (গ্লো.এ্যাক্ট বাংলাদেশ) প্রকল্পের অধীনে, ইউএনওডিসি এবং আইওএম প্রতিবেদন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশে প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয় যে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষমতা আরও কমেছে। মহামারী চলাকালীন যৌন শোষণের জন্য পাচারের খুব কম ঘটনা শনাক্ত হয়। আর, পাবলিক স্পেস গুলো বন্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে বিধিনিষেধের কারণে পাচার আরও গোপন হয়েছে এবং ভুক্তভোগীদের অনিরাপদ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে পাচারের শিকারদের শনাক্ত করা কঠিন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মানব পাচার অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্তের সংখ্যা ২৭ শতাংশ কমেছে। যেটি দক্ষিণ এশিয়ায় কমেছে ৫৬ শতাংশ। এছাড়াও, নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে কম শনাক্তকরণের কারণে আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মানবপাচার অপরাধ শনাক্ত হওয়ার হার ১১ শতাংশ কমেছে।
ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে, ইউএনওডিসির জাতীয় প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর মাহদি হাসান-এই প্রতিবেদনের পদ্ধতি, মূল ফলাফল এবং নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরেন। প্রতিবেদনটিতে, ১৪১টি দেশের মানব পাচার বিষয়ক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শনাক্ত করা পাচার মামলার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী, আঞ্চলিক এবং জাতীয় স্তরে মানব পাচারের নিদর্শন দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদনে মানব পাচার বিষয়ক ৮০০টি মামলার সারাংশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “মানব পাচারের প্রবণতা ও ধরনে কোভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উদীয়মান প্রভাব উদ্বেগজনক। আমি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মানব পাচার শনাক্ত করার সক্ষমতা জোরদার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। মানব পাচার প্রতিরোধে ভুক্তভোগী-বান্ধব ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা তৈরিতেও জোর দেওয়া দরকার।”
ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা বলেছেন, “অনলাইনে মানব পাচারের নিয়োগ এবং সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে মানব পাচারের মত বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। করোনা মহামারীতে এই পরিস্থিতি বেড়েছে।মানব পাচারকারীরা আরও প্রযুক্তি-সচেতন হয়ে উঠছে। তবে সফলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা মানব পাচারকারীদের শনাক্ত, তদন্ত এবং বিচার করতে পারি।”
প্রতিবেদন অনুসারে, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দায়মুক্তির উচ্চমাত্রা দেখা গেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে পাচারকারীদের দোষী সাব্যস্ত করার সংখ্যা বাকি বিশ্বের তুলনায় কম।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস বলেছেন, “আমাদের অবশ্যই টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিক্রিয়াসহ দারিদ্র্য এবং পদ্ধতিগত বৈষম্যকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করা দরকার।”
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন (বিডিইউএনএনএম)-এর সমন্বয়ক আবদুসসাত্তার এসোয়েভ বলেছেন, “বাংলাদেশের জন্য মানব পাচার একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। মানব পাচারের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং প্রতিবেদন, মানব পাচার মোকাবেলা করতে, প্রমাণ-ভিত্তিক নীতি ও প্রোগ্রামিং বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করে। এগুলো সরকার ও নীতিনির্ধারক সহায়তা করে। মানব পাচার সংক্রান্ত গ্লোবাল রিপোর্ট ২০২২-এ বিশ্ব, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে মানব পাচারের প্রবণতাগুলোর একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে; যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা ও প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করবে।”
প্রতিবেদনে, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিপর্যয় এবং মানব পাচারের মধ্যে যোগসূত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্যোগ-প্রবণ অঞ্চলে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।