পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
তিনি অ্যামাইলয়েডোসিস নামে এক বিরল রোগে ভুগছিলেন। এই রোগে বিভিন্ন অঙ্গে একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরি হয়, যার ফলে অঙ্গগুলো আর ঠিকমতো কাজ করে না ।
১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে, রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন মোশাররফ।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোশাররফ প্রায় নয় বছর দেশ শাসন করেন। তার মেয়দের বেশিরভাগ সময় তিনি একই সাথে রাষ্ট্রপতি এবং সেনাবাহিনী প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক মাস আগে মোশাররফের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারত শাসিত কাশ্মীরের কারগিলে প্রবেশ করে। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের পর, পরমানু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটার উচ্চতায় সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়।
পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে, এবং তাদের দখল করা ভারতের ভূখণ্ড ফিরিয়ে দিলে প্রায় তিন মাস ধরে চলা কারগিল যুদ্ধের অবসান হয়। ভারত জানায় যে এই যুদ্ধে ৫২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পাকিস্তান পক্ষের ধারণা মতে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকশ’ থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
এর যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে সামরিক বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা দেখা দেয়।শরিফ ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তড়িঘড়ি করে মোশাররফকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।সেনাবাহিনী নতুন চেইন অফ কমান্ড মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পর কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারা রাজধানী ইসলামাবাদ দখল করে নেয়, শরিফকে গ্রেপ্তার করে এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং জবাবদিহি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে, পাকিস্তানের চতুর্থ সামরিক স্বৈরশাসক মোশাররফ প্রাথমিকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
মোশাররফের "আলোকিত সংযমের" দৃষ্টিভঙ্গি, ইসলামের মৌলবাদী ব্যাখ্যার পরিবর্তে মধ্যপন্থী ব্যাখ্যাকে উৎসাহিত করে এবং পাকিস্তানের সচেতন জনগণ এই দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায়। কেনানা, তারা আফগানিস্তানের ঘটনা, তালিবাদের উত্থান, আল কায়েদার উপস্থিতি এবং আফগানিস্তানের আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের মতো ঘটনায় শঙ্কিত ছিলেন।
তার শাসনামলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দমন পিড়ন চলে।হাজার হাজার রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। মোশাররফ অবশেষে ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করেন। এই কাজের কারণে ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয় এবং ছয় বছর পরে তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২০ সালে এই শাস্তি বাতিল করা হয়।
স্বল্প সময়ের জরুরি অবস্থার পর ২০০৮ সালে পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ নির্বাচনে ভূট্টোর দল জয়লাভ করে। অভিশংসনের মুখোমুখি হয়ে মোশাররফ ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরের বছর পাকিস্তান ত্যাগ করেন।
মোশাররফ জঙ্গিদের পক্ষ থেকে চালানো কমপক্ষে চারটি হত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। এরমধ্যে, তার শাসনামলেই তিনটি হত্যা চেষ্টা চালানো হয়।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।