যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রাজিলের সদ্য অভিষিক্ত বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও "লুলা" দ্য সিলভাকে শুক্রবার হোয়াইট হাউজে স্বাগত জানিয়েছেন,তাদের নিজ নিজ গণতন্ত্রের উপর হামলার পর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছেন বাইডেন।
দ্য সিলভা, সাধারণভাবে লুলা নামে পরিচিত, অক্টোবরের এক ফিরতি নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে অল্প ব্যবধানে পরাজিত করার পরে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। লুলার অভিষেকের এক সপ্তাহ পরে, ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারী বোলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক রাজধানীতে হামলা চালায় এবং নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার দাবিতে প্রধান সরকারী ভবনগুলিতেও হামলা চালায়। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হামলার প্রতিচ্ছবি ছিল এই আক্রমণটি। ট্রাম্পের সমর্থকরা ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে বাইডেনের বিজয় মেনে নেইনি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিলো।
বাইডেন ব্রাসিলিয়া হামলার পরে লুলার সাথে কথা বলেছেন, এই কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাঁর সঙ্গে "বিস্তারিত পরামর্শের" জন্য হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বাইডেন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই জুটি তাদের "রাজনীতিতে চরমপন্থা এবং সহিংসতার স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান" এবং, বিশেষ করে ২০২৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠেয় গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে কীভাবে দুই দেশ এই অঞ্চলে এবং বিশ্বজুড়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচারের জন্য একসাথে কাজ চালিয়ে যেতে পারে সে সব বিষয়ে আলোচনা করবেন।
পরামর্শক সংস্থা আরকো অ্যাডভাইসের কৌশল পরিচালক এবং সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে আমেরিকাস প্রোগ্রাম এর অনাবাসী সিনিয়র সহযোগী থিয়াগো ডি আরাগাও বলেছেন, "অবশ্যই, এটি গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধ এবং প্রতিষ্ঠানের শক্তি সম্পর্কে একসাথে থাকার জন্য তাদের একটি ভাল আখ্যান তৈরি করে।”
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "আমরা অবশ্যই আশা করতে পারি যে তারা গণতন্ত্রের শক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি যৌথ বার্তা দেবেন, গণতন্ত্র কীভাবে সংরক্ষিত হওয়া উচিত তার প্রতীক হিসাবে ব্রাসিলিয়ায় যা ঘটেছে এবং ওয়াশিংটনে যা ঘটেছে তার নিন্দা জানাবেন কারণ এই দুটি দেশ এই গোলার্ধের বৃহত্তম গণতন্ত্র।
সম্পর্কের নবায়ন
বলসোনারোর অধীনে ব্রাজিলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শীতল হয়ে গিয়েছিল এবং ওয়াশিংটন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং অনিয়মিত অভিবাসন পরিচালনা সহ সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য সম্পর্ক নবায়ন করতে চাইছে।যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে যাদের বেইজিংয়ের উপর বিশাল বাণিজ্যিক নির্ভরতা রয়েছে। ব্রাসিলিয়া হল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এর অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠীর অংশ, একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠী যা বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর এক চতুর্থাংশেরও বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ নিয়ে গঠিত।
ডি আরাগাও বলেছেন, বাইডেনের পক্ষে আশা করা কঠিন হবে যে লুলা লাতিন আমেরিকায় চীনা প্রভাবের বিরুদ্ধে মিত্র হতে পারেন। তিনি আরো বলেন, "আমি লুলাকে চীনপন্থী একজন সক্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে দেখছি না কিন্তু চীনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে লুলার নিরপেক্ষতা এবং ব্রাজিলের নিরপেক্ষতা চীনের জন্য জয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরাজয়স্বরূপ।”
ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়েও ব্রাজিল নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া ব্রাজিলের মোট প্রয়োজনের এক চতুর্থাংশ সার সরবরাহ করে, এবং মস্কোকে তার আক্রমণের জন্য শাস্তি দেওয়ার জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি এই সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসানের আগে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ব্রাজিলের ওয়ার্কার্স পার্টির ঐতিহাসিক সম্পর্কও ব্রাজিলের নেতাদের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকিকে সমর্থন করার জন্য শক্তিশালী অবস্থান নিতে বাধা দেয়।
বাইডেন এবং লুলা ঘোষণা করবেন যে ওয়াশিংটন আমাজন বন উজাড়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে একটি বহুপাক্ষিক তহবিলে অবদান রাখার কথা বিবেচনা করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বলসোনারোর বিচ্ছিন্নতার পরে, বাইডেনের অনুমোদন ব্রাজিলকে তার পরিবেশগত কূটনীতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লুলার প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করবে।