বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিতে নির্বাচন কমিশনে যায়। তার এই মনোনয়নের ফলে নিশ্চিত হলো যে, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পর তিনিই হচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাবনায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তিনি কারারুদ্ধ হন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এছাড়াও, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর মানুষদের হত্যা, ধর্ষণ, চুরি এবং অন্যান্য অপরাধের তদন্তকারী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দীন।
বিচারক হিসেবে বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে, ২৫ বছর পর তিনি ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অন্যতম কমিশনার ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গত জাতীয় কাউন্সিলে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে এলএলবি এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই
বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে যাওয়া মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন, সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা। রবিবার (১২ ফেব্রয়ারি) সাহাবুদ্দিন নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, “এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটা মহান আল্লাহর ইচ্ছা।”
অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের অন্যতম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিতে নির্বাচন কমিশনে যায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির, আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
একজন অসাধারণ ব্যক্তি: তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন যে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে একজন অসাধারণ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা একজন অসাধারণ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। এমন একজনকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে, যিনি ঝুঁকি নিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। যার মধ্যে ভদ্রতা, নম্রতা ও রাজনৈতিক বিজ্ঞতা রয়েছে।”
রবিবার দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক বসেছিল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। তখন রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়নের জন্য সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই ক্ষমতাবলে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।”