অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

খেলাপি ঋণের জন্য সাধারণ মানুষ নয়, বড় ব্যবসায়ীরা দায়ী: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ২৫ ফেব্রয়ারি, ২০২৩।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ২৫ ফেব্রয়ারি, ২০২৩।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, “ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এক শতাংশের জন্যও সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। বরং বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা স্বেচ্ছায় ফেরত না দেওয়ার অভিপ্রায়ে ঋণ নিয়ে থাকেন।” শনিবার (২৫ ফেব্রয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তনে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, “তারা ঋণ নেয় (ইচ্ছা করে) পরিশোধ না করার জন্য। অবশ্য এর সঙ্গে কিছু ব্যাংকার জড়িত।”

বর্তমানে দেশের ব্যাংক ও অন্যান্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ রয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি; যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের এটাই সর্বোচ্চ পরিমাণ।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৬ লাখ কোটি টাকা।

শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “কেউ হবে রাজনীতিবিদ, কেউ হবে ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি, কেউ হবে আমলা। মনে রাখবেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। তা করতে ব্যর্থ হলে দেশ ও জাতির জন্য চরম বিপদ ডেকে আনে।”

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে শিক্ষিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এসব শিক্ষার মূল ক্ষেত্র। দুঃখের বিষয় হলো, আজকের রাজনীতিতে ক্ষমতা এবং অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণকারী শক্তির ভূমিকা পালন করে। ছাত্র রাজনীতিতে এসব অশুভ ছায়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।”

ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে আবদুল হামিদ বলেন, “তারা নৈতিকতা বাদ দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন, কীভাবে রাতারাতি ধনী হওয়া যায় তা চিন্তা করেন। একই কথা সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। চাকরি করার পর কীভাবে দ্রুত গাড়ি ও বাড়ির মালিক হবেন তা নিয়েই তারা চিন্তিত।”

তিনি বলেন, “তারা ভুলে যায় যে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং জনগণের সেবক। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে তারা মাঝে মাঝে দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করতে দ্বিধা করে না।”

উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দুর্নীতি অন্যতম বড় বাধা উল্লেখ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং শিক্ষকদেরও দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কিছু উপাচার্য ও শিক্ষক আইনের অপব্যবহার করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত।”

আবদুল হামিদ বলেন, “প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে, একটি মহল আইনের অপব্যবহার করে তাদের সুযোগ-সুবিধা পেতে খুব ব্যস্ত। তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্রদের ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না।”

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “শিক্ষা নিয়ে কোনোভাবেই আপস করা যাবে না। তবে, শিক্ষার্থীরা একাডেমিক সব কার্যক্রম ঠিক রেখে রাজনীতি, সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য যে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিক্ষার সঙ্গে আপস করে অ-একাডেমিক কর্মকাণ্ডে বেশি সময় দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে বিশ্বের প্রথম এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষা দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

XS
SM
MD
LG