অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি


আরাভ খান
আরাভ খান

দুবাই-ভিত্তিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশি পুলিশ অফিসার হত্যার পলাতক সন্দেহভাজন আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সংস্থার ওয়েবসাইটে রেড নোটিশ তালিকায় তার নাম স্থান পায়। এই তালিকায়, এ পর্যন্ত ৬৩ জন বাংলাদেশির নাম স্থান পেয়েছে।

চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গণমাধ্যমকে জানান, “ইন্টারপোল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো অনুরোধ পত্র গ্রহণ করে এবং এর তিনদিন পর রেড নোটিশ জারি করে।” তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা পলাতক আরাভ খানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আপলোড করেছে এবং তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে।”

রেড নোটিশে আরাভের ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, বয়স, জাতীয়তা এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলেও, তালিকায় তার জাতীয়তা বাংলাদেশি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবররিন সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে আরাভ দুবাইয়ে নজরদারিতে রয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।”

গত ১৬ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন যে দুবাইয়ে আরভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনে অংশ নেয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

আর, ১৮ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরাভ খানকে দেশে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রাক্তন আইজিপি বেনজির আহমেদ এবং আরাভ খানের মধ্যে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ উঠায়, প্রাক্তন পুলিশ প্রধান গত ১৯ মে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া এক পোস্টে আরাভকে চেনার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

প্রাক্তন পুলিশ প্রধান তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমি আপনাদের সবাইকে জানাতে চাই যে আমি ‘আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয়’ নামে কাউকে চিনি না। এমনকি তার সাথে আমার প্রাথমিক পরিচয়ও নেই।”

২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রাক্তন ইন্সপেক্টর মামুন এমরান খান হত্যা মামলায় আরাভ খান এবং অন্য নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG