অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা


প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান,
প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান,

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র প্রথম আলোর সম্পাদকসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

বুধবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টা ১৯ মিনিটে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

যেখানে বলা হয় যে, প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, অজ্ঞাতনামা সহকারী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে রমনা থানায় ওই দিন রাত দেড়টায় মামলাটি দায়ের করেন আবদুল মালেক (মশিউর মালেক) নামে এক আইনজীবী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

প্রথম আলো সর্বশেষ মামলার বাদী আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে। দিনি বলেন, “মামলাটার আমি এজাহার দায়ের করেছি, হয়েছে (মামলা) কি না, জানি না । হয়েছে কি না, ওরা (পুলিশ) যোগাযোগ করেছে কোথায় কোথায়, পুলিশের ব্যাপার তো, বোঝেন না”।

তবে রমনা থানা পুলিশ পত্রিকাটিকে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে গণমাধ্যমটির দুই সাংবাদিক থানায় যান। কিন্তু দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করেও থানায় ঢুকতে পারেননি।

তাদের এফআইআরের অনুলিপি সংগ্রহ করতে বৃহস্পতিবার সকালে যেতে বলা হয়।

ইউএনবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাসা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরা তুলে নেওয়ার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর বুধবার বিকেলে পত্রিকাটির সাভার প্রতিনিধি শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক একটি মামলা দায়ের করা হয়।

রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বাদী হয়ে শামসের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতা দিবসে ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

সাভারের নিজ বাসা থেকে তাঁকে সিআইডি সদস্যরা তুলে নেওয়ার প্রায় ১০ ঘন্টা পর বুধবার বিকেলে এই মামলা দেওয়া হয়।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে (২৬ মার্চ) বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বুধবার বেলা ১টা ৩২ মিনিটের দিকে ফার্মগেট এলাকার আল রাজি হাসপাতালের সামনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় বাদী প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি খবর পড়েন। তাঁর ফেসবুক পেজেও খবরটি শেয়ার করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে হাতে ফুল ধরা শিশুর ছবিসহ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ছেলেটির নাম জাকির হোসেন এবং তিনি বলেন, “ভাত না থাকলে স্বাধীনতা দিয়ে কী করব? আমি যখন বাজারে যাই তখন আমার ঘাম হয়, আমাদের মাছ, মাংস এবং ভাতের স্বাধীনতা দরকার”।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রতিবেদনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং দেশে-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ছেলেটির নাম জাকির হোসেন থাকলেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর ডটটিভির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছেলেটির আসল নাম সবুজ আহমেদ এবং সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।

একাত্তর ডটটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলেটি এমন কিছু বলেনি যে, আমার কাছে ভাত না থাকলে স্বাধীনতা দিয়ে কী করব? আর প্রতিবেদক তাকে ১০ টাকা দিয়ে তার ছবি তোলেন।

বাদী এজাহারে বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল যাতে ভুয়া নাম ও উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এমন প্রতিবেদনে তাঁর মতো দেশ-বিদেশের আরও অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার ভোর ৪টার দিকে শামসুজ্জামান শামসকে সাভারের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি সদস্যরা।

XS
SM
MD
LG