অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে আমেরিকার জনগণ: যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে প্রস্তাব


বাতাসে উড়ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা।
বাতাসে উড়ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা।

বাংলাদেশের ৫২তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও এর উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির স্বীকৃতি ও প্রশংসা করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের পক্ষ থেকে সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জো উইলসন কংগ্রেসে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবে বলা হয়, বোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে ভুমিকা রেখেছে, আমেরিকার জনগণ এর প্রশংসা করে।

প্রস্তাব উত্থাপনকালে কংগ্রেসম্যান উইলসন ৫১ বছর আগে ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা স্মরণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, ৯ মাসব্যাপী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিলো গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সংগ্রাম।

প্রস্তাবে বলা হয় বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি, যার মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৭ ডলার; যা এখন তার আঞ্চলিক প্রতিবেশিদের চেয়ে অনেক বেশি।

প্রস্তাবে আরো উল্লেখ করা হয় যে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯০০ কোটি ডলার থেকে ৪৫০০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে এবং বয়স্ক সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থ-সামাজিকখাতে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

প্রস্তাবে বলা হয়; বাংলাদেশ সফলভাবে মডারেট (মধ্য পন্থার) মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা বজায় রেখেছে, উগ্রবাদ দমন করেছে এবং দেশটির জনগণ বন্দুকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

এতে বলা হয়; আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের একটি বৃহত্তম উৎস। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অবদান রেখে চলছে।

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, “প্রতিবেশি বার্মা (মিয়ানমার) কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা রোধে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে, আমেরিকার জনগণ তার প্রশংসা করে। মিয়ানমার সৃষ্ট এই সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা প্রায় দুইশ’ কোটি ডলারেরও বেশি।”

এতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ; যা আমেরিকার জনগণের কাছে সর্বদা প্রশংসা অর্জন করেছে। উভয় দেশই অর্জিত সমৃদ্ধি বিনিময়ের জন্য তাদের জনগণের সঙ্গে জনগণ এবং সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আরো উন্নত করতে চায়।

কংগ্রেসম্যান জো উইলসন উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণকে ১০ কোটি ডোজেরও বেশি কোডিভ ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের জনগণ যখন স্বাধীনতার ৫২ বছর উদযাপন করছে, তখন আমেরিকার জনগণ বাঙালি জাতির ভূয়সী প্রশংসা ও স্বীকৃতি প্রদান করে।

বর্তমান ও ভবিষ্যতে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় নিরাপত্তার লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গঠনমূলক অংশীদার থাকার আন্তরিক দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় কংগ্রেসম্যান জো উইলসন উত্থাপিত প্রস্তাবে।

XS
SM
MD
LG