বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, শ্রীলংকা এবং নেপালের নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা কৃষি ও কৃষির কারণে পরিবেশগত অবনতির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যকর পুষ্টি এবং খাদ্য বর্জ্য হ্রাসের বিষয়ে অভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সকলেই একমত যে এ বিষয়ে সামগ্রিক এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের পাঁচটি দেশের মধ্যে নয়াদিল্লিতে এ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনেকে অনলাইন প্লাটফরমে এই আলোচনায় যোগ দেন। ইইউ-অর্থায়ন করা বৃহত্তর 'সবুজ চুক্তি' প্রসঙ্গে ইইউ ওয়ার্কশপ সিরিজের অংশ হিসেবে, 'ফার্ম টু ফর্ক' (এফ২এফ) কৌশল নিয়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
কোভিড-১৯ মহামারী, ইউক্রেন-বাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়া; বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে। যার ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্ষুধা বা স্থূলতার মতো খাদ্য সম্পর্কিত স্বাস্থ্য হুমকির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া, বর্তমান খাদ্য উৎপাদন, পরিবহন এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিগুলো খাদ্য শৃঙ্খলে দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ২১ থেকে ৩৭ শতাংশ সহ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের ডিরেক্টরেট-জেনারেল ফর ফুড সাসটেইনেবিলিটির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ক্লেয়ার বুরি কর্মশালার উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “ইউরোপে, আমাদের নাগরিকরা জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে। তাদের সুপারিশগুলো আমরা যে টেকসই নীতিগুলো তৈরি করছি, এবং আমরা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে যে সহযোগিতামূলক কাজগুলো বিকাশ করতে চাই, তা এগিয়ে যাওয়ার পথকে সমর্থন করে।”
ডা. কোয়েন ভ্যান ডাইক আরো বলেন, “আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, তথ্য বিনিময় করতে হবে এবং জোট তৈরি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ-এর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট। আর, আমাদের এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।”
তিনি বলেন, “খাদ্য ব্যবস্থা একটি জটিল ধারণা এবং ১৯৫০ এবং ৬০-এর দশকের সবুজ বিপ্লবের চেয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।”
এই কর্মশালায় ইইউ এবং ভারতের চারটি প্রতিবেশী দেশ (ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং বাংলাদেশ) এর মধ্যে মাটির উর্বরতা এবং জৈব উৎপাদন সম্পর্কে মতামত বিনিময়ের সুযোগ করে দেয়। আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কীটনাশক এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস-এর টেকসই ব্যবহার এবং খাদ্যের ক্ষতি এবং অপচয়।
নেপালের ফুড সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি অতুল উপাধ্যায় বলেছেন, “স্বাস্থ্যকর, টেকসই খাদ্যের দিকে পরিবর্তনের প্রচার, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে করতে হবে। আর খাদ্য ব্যবস্থা প্রত্যেকের ব্যবসা।”
উল্লেখ্য, সবুজ চুক্তির অংশ হিসাবে, ইইউ তার খাদ্য ব্যবস্থাকে (ফার্ম থেকে ফর্ক কৌশল) প্রতিযোগিতামূলক স্থায়িত্ব, মানব ও গ্রহ স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী অভিন্ন মানদণ্ডে রূপান্তর করার জন্য পদক্ষেপ এবং প্রতিশ্রুতি প্রস্তাব করেছে।