অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকায় ‘ছাত্র জনতার সমাবেশ’


ঢাকায় ‘ছাত্র জনতার সমাবেশ’
ঢাকায় ‘ছাত্র জনতার সমাবেশ’

বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে, “ছাত্র জনতার সমাবেশ” নামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে, রাজধানী ঢাকার শাহাবাগে, জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ছাড়া, তাদের অন্য দাবিগুলো হলো; সুলতানা জেসমিন-এর বিচারবহির্ভূত হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-এর অধীনে গ্রেপ্তার হওয়া সকলের মুক্তি দেয়া এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ডেটা সুরক্ষা আইন (ডিপিএ) প্রণয়ন না করা।

সমাবেশে রাজনীতি বিশ্লেষক আবু সাঈদ খান বলেন, “এই আইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রণয়ন কার হয়েছিলো। এটি এখন মানুষের নিরাপত্তা এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির সমালোচনা করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই আইন দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলার জন্য একটি বাধা হিসাবে দেখা দিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাস, তবে এর বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকতে হবে। কিন্তু এই আইন মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে বাধা দেয়, যা যুদ্ধের মানসম্পন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।এই আইনটি বিলুপ্ত করা ছাড়া আমাদের পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন করা হলেও, এখন সংবিধানের নীতি লঙ্ঘন করে জনগণের নিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হলো এমন একটি আইন, যেখানে কিছু ধারা রয়েছে যা অপরাধীদের দায়মুক্তি দিতে সহায়তা করে এবং ভিন্নমতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সুযোগ করে দেয়।”

তিনি বলেন, “আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনবাতিলের দাবি জানাচ্ছি, কিন্তু এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ, এই সরকারের কিছু করার জন্য কোনো আইনের প্রয়োজন নেই। আমরা ইতোমধ্যেই এমন অনেক মামলার কথা জানি, যেগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযুক্তকে প্রথমে গ্রেপ্তার করেছে এবং কয়েক ঘণ্টা পরে মামলা করেছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান বলেন, “আমাদের দেশ অবশ্যই একটি স্বাধীন দেশ; তবে, আমাদের মানুষ স্বাধীন নয়। আওয়ামী লীগ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছে; ২০০ বছরের পুরনো আইন (অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৮২৩) এখনো আমাদের দেশে কাজ করছে। যার সমস্ত ঔপনিবেশিক চরিত্র রয়েছে এবং যা এখনো মুক্ত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাধা।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু ব্যক্তি একটি পত্রিকার লাইসেন্স বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। তবে আমরা জানি তারা কারা ছদ্মবেশে, তারা কেউ নয়, তারা সরকারের লোক এবং তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চায়।”

অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান আরো বলেন, “আজ আমরা এখানে এসেছি আমাদের অধিকার ফিরে পেতে। আমরা স্বাধীন জীবন যাপন করতে চাই, আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের মতামত ও চিন্তা প্রকাশ করতে চাই। সরকারের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

সমাবেশ চলাকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ডেটা সুরক্ষা আইন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিষয়ভিত্তিক কার্টুন এবং গণস্বাক্ষর প্রচারণা চালানো হয়।

XS
SM
MD
LG