সুদানের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে শনিবার রাজধানী ও দেশটির বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষ বিশৃঙ্খলা পীড়িত দেশটিতে ব্যাপকতর সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
খার্তুম শহরের কেন্দ্রস্থল ও বাহরি বসতির আশেপাশের এলাকা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস মিলিশিয়া একের পর এক বিবৃতিতে, দক্ষিণ খার্তুমে তাদের একটি ঘাঁটিতে সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। দাবি করছে, তারা শহরের বিমানবন্দর দখল করেছে এবং দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও বাবাসস্থল খার্তুমের রিপাবলিকান প্রাসাদের "পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ" নিয়েছে।
মিলিশিয়া বাহিনী আরো বলেছে যে তারা খার্তুম থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (২১৫ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে , উত্তরাঞ্চলীয় মারাউয়ি শহরের একটি বিমানবন্দর ও বিমান ঘাঁটি দখল করেছে। বার্তা সংস্থা এপি এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলে আরএসএফ সৈন্যরা তাদের সৈন্যদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে, সামরিক বাহিনী আরএসএফকে “বিদ্রোহী বাহিনী” হিসেবে ঘোষণা করে এবং আধা সামরিক বাহিনীর বক্তব্য-কে “মিথ্যা” বলে অভিহিত করে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো। তাদের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে, দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর পুনরুজ্জীবিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব হয়।
খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করা বাণিজ্যিক বিমানগুলি তাদের উডয়ন শুরু করা বিমানবন্দরে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আরএসএফ-কে কীভাবে সামরিক বাহিনীতে একীভূত করা হবে এবং কোন কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়া তদারকি করবে, তা নিয়ে মতবিরোধ থেকে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দানা বাঁধে। মিলিশিয়া বাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একীভূতকরণ সুদানের অস্বাক্ষরিত রূপান্তর চুক্তির একটি মূল শর্ত।
বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিরল ভাষণে সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষ জেনারেল অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীর সম্মতি ছাড়াই খার্তুম ও সুদানের অন্যান্য এলাকায় আধাসামরিক বাহিনী তাদের সদস্যদের মোতায়েন করছে এবং আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষের বিষয়ে সতর্ক করেন। আরএসএফ আগের এক বিবৃতিতে তাদের সদস্যদের মোতায়েন করার কথা স্বীকার করেছিলো।
সুদানের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের অংশ সুদান ডক্টরস কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংঘর্ষ “ বহুমাত্রিক ক্ষতের” সৃষ্টি করেছে । তবে, লড়াইয়ে হতাহতের সংখ্যা এখনো স্পষ্ট নয়।
সুদানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জন গডফ্রে অনলাইনে লিখেছেন যে দূতাবাস কর্মীদের সাথে তিনি এখন একটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন; যেমন করে সুদানের নাগরিকরা খার্তুম জুড়ে বা অন্য কোন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
শনিবারের বিবৃতিতে আরএসএফ বলেছে, সরকারি পদে থাকা তিন সাবেক বিদ্রোহী নেতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।এই পদক্ষেপকে দৃশ্যত সংঘাত প্রশমনের উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।