ভারতে জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকা গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অশান্ত হয়ে রয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৪০ সিআরপিএফ জওয়ানের উপর আক্রমণ হয়েছিল পুলওয়ামা-এ। এখনও অশান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা ও তার সংলগ্ন একাধিক এলাকা। বারে বারেই সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে জম্মু, রাজৌরি, পুঞ্চে নাশকতা চলছে। কখনও পাক সেনারা অতর্কিতে হামলা চালাচ্ছে নিয়ন্ত্রণরেখায়, কখনও জঙ্গি নাশকতা ঘটছে দক্ষিণ কাশ্মীরের একাধিক সেক্টরে। ফের পুলওয়ামা ধাঁচে হামলা চালিয়েছে লস্কর জঙ্গিরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রাক লক্ষ্য করে অবিরাম গুলি বর্ষণের পরে গ্রেনেড ছুড়ে ট্রাক জ্বালিয়ে দেয় জঙ্গিরা । আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় পাঁচ সেনা জওয়ানের।
শুক্রবার ২১ এপ্রিল বেলা ৩টে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে দৃশ্যমানতা কম। বাজ পড়ছে ঘন ঘন। এমন পরিস্থিতিকেই কাজে লাগায় লস্কর জঙ্গিরা। অন্তত সাত জনের একটি দল আগেই খবর পেয়েছিল ঠিক কোথা দিয়ে সেনা ট্রাক যাওয়ার কথা। পুঞ্চ থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরত্বে ভিমবের গলি দিয়ে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেনাদের দিয়ে ট্রাকটির টহল দিতে যাওয়ার কথা ছিল। জঙ্গিদের ধরতেই উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস। পুলওয়ামার ঘটনার পর থেকে একাধিক বার সেই ধাঁচে হামলা হয়েছে দক্ষিণ কাশ্মীরের নানা সেক্টরে। কুপওয়ারাতেও একইভাবে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। জম্মুতে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানঘাঁটিতে পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা ড্রোন হামলা চালায় এর আগে। এর পর থেকেই কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি ও এনকাউন্টার চালাচ্ছে ভারতীয় বাহিনী
রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেনা ট্রাক ভিমবের গলি দিয়ে যাওয়ার সময়েই আতর্কিতে গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। তুমুল বৃষ্টি ও দৃশ্যমানতা কম থাকায় শুরুতে ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি সেনা জওয়ানরা। তবে ট্রাকে গুলি এসে লাগার পরই সতর্ক হয়ে যান সকলে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দাদের অনুমান, দুই পক্ষের কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছিল। কারণ ট্রাকটির দু’পাশে অসংখ্য বুলেট গেঁথে ছিল। অনুমান, গুলি চালাতে চালাতেই আচমকা গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। ট্রাকের গায়ে গিয়ে লাগে গ্রেনেড। দাউদাউ করে আগুন ধরে যায়। ভেতরেই ঝলসে মৃত্যু হয় পাঁচ জওয়ানের। সেই সময় ঘন ঘন বাজও পড়ছিল। তাই শুরুতে মনে করা হয়েছিল বাজ পড়ে ট্রাকে আগুন লেগে গেছে। কিন্তু পড়ে বোঝা যায়, দুর্যোগের কারণে নয়, জঙ্গিদের হামলাতেই শহিদ হয়েছেন পাঁচ জওয়ান।
চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল মনোজ পাণ্ডে জানিয়েছেন, শহিদ পাঁচ জওয়ানের চারজন পাঞ্জাবের, একজন ওড়িশার। আরও এক জওয়ান গুরুতর জখম। তাঁকে রাজৌরির সেনা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছেন হাবিলদার মনদীপ সিং, ল্যান্স নায়েক কুলওয়ান্ত সিং, সেপাই হরকৃষ্ণাণ সিং এবং সেপাই সেওয়াক সিং।
গত বছর মোহালির পুলিশ ফাঁড়িতে ঠিক একই কায়দায় হামলা চালিয়েছিল লস্কর জঙ্গিরা। পাঞ্জাব পুলিশের গোয়েন্দা সদর দফতরে রকেট-চালিত গ্রেনেড বা আরপিজি হামলা হয়েছিল।
আরপিজি হল সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি অস্ত্র। অনেকটা মিসাইলের মতো হামলা চালাতে পারে। আরপিজি কাঁধে নিয়ে ছোড়া হয়, একে বলা হয় শোল্ডার ফায়ার্ড মিসাইল।যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের যুদ্ধট্যাঙ্ক ধ্বংস করতে এইধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা করা হয়।
আরপিজি হল রুকনয় পিওটিভোটানকোভি গ্রানারোমিওটের, যেটি আসলে হ্যান্ডহেল্ড অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গ্রেনেড লঞ্চার । আরপিজি-র বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে, যা অস্ত্রের ব্যবহার অনুযায়ী ওয়ারহেডের বিভিন্ন ক্ষমতা, পরিসীমা এবং তীক্ষ্ণতার মাত্রা অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়েই এই জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছিল। সোভিয়েত জমানার আরপিজিগুলি ভিয়েতনাম যুদ্ধের পাশাপাশি আফগানিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইরাক এবং এমনকী জম্মু ও কাশ্মীরেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। জঙ্গিদের কাছ থেকে বহুবার এই জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।